নিজস্ব প্রতিনিধি(সতীশ কুমার):রমধ্যরাতে নাটকীয় বিদায়! অনাস্থা ভোটে হার।পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে বাধ্য হলেন ইমরান খান। যদিও তার আগে চেষ্টা কম করেননি। ঘনিষ্ঠ ডেপুটি স্পিকার, প্রেসিডেন্ট— পাশে পেয়েছিলেন সকলকেই। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। বিরোধীরা গেল সুপ্রিম কোর্টে।সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল অনাস্থা ভোট করাতেই হবে।মনে করা হচ্ছে, বিরোধী নেতা শাহবাজ শরিফই হতে চলেছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই। এবার প্রশ্ন উঠছে নতুন প্রধানমন্ত্রী আমলে কেমন হবে পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো এবং আমেরিকার সম্পর্ক। কারণ এখন এর ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে উপমহাদেশের পরিস্থিতি।পাকিস্তানে পশ্চিমে আফগানিস্তান। উত্তর-পূর্বে চীন। পূর্বে ভারত। সেদেশে বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা নীতি মূলত নির্ধারণ করে পাকিস্তান সেনা। কিন্তু ইমরানের আমলে তার ব্যতিক্রম ঘটতে শুরু করেছিল। ইমরানের আলটপকা মন্তব্য সে দেশের সঙ্গে আমেরিকার দূরত্ব বাড়িয়েছিল। বরং ইমরান অনেক বেশি আগ্রহী ছিলেন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ায়।শেষ দিকে রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর সখ্যতাও ভালো চোখে দেখেনি আমেরিকা। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর দিনে তিনি হাজির হন রাশিয়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা মেনে নিতে পারেনি পাক সেনাও। এই বিষয়টি নাকি অনুঘটক হিসেবে আজ করেছে ইমরানের পতনে। আর সে কারণে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কীভাবে প্রভাবিত হবে, দেখে নেওয়া যাক।▪আফগানিস্তান◆ তালিবানকে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বারবার পাক সেনার ওপর। কিন্তু বিগত দিনে সেই তালিবানের সঙ্গেই সম্পর্ক খারাপ হয়েছে পাক সেনার। সেই জায়গায় কাছে এসেছে কাতার। তালিবান এখন কাতারের ওপর অনেক বেশি ভরসা করে। আর্থিক থেকে সামরিক সব দিকেই। আর আমেরিকাও সেই সুযোগই নিয়েছে। ইন্দো-পেসিফিক সিকিউরিটি সেন্টারের ডিরেক্টর লিসা কার্টিস জানালেন, ‘আমাদের (আমেরিকা) আর পাকিস্তানকে দরকার নেই তালিবানের কাছে পৌঁছনোর জন্য। সেই ভূমিকা নিয়েছে কাতার।’তালিবানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার অন্য একটি কারণও রয়েছে। তাদের ওপর চটেছে পাক সেনা, কারণ তালিবানি হামলায় আফগানিস্তান সীমান্তে তাদের অনেক জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। আবার এই তালিবানের উত্থান নিয়ে নরম সুরে কথা বলার জন্য বিশ্বের অন্য দেশের আস্থা হারিয়েছেন ইমরান।▪চীন:◆ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই লাগাতার চীনের প্রশংসা করে গিয়েছেন ইমরান। বারবার দেশবাসীকে বলেছেন, চীন কী কী ভাবে সাহায্য করছে পাকিস্তানকে। ছ’ হাজার কোটি ডলারের চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরও তৈরি হচ্ছে। তবে আমেরিকা আবার এই নিয়ে বেজায় চটেছে। সিদুঁরে মেঘ দেখেছে ভারতও। নতুন প্রধানমন্ত্রী কোন পথে হাঁটেন, সেটাই দেখার।▪ভারত:◆ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ক্রমাগত ভারত-বিরোধী মন্তব্য করেছেন ইমরান। ভারতে ‘সংখ্যালঘু খুন’ নিয়ে সরব হয়েছেন। আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। তিন বছর সাত মাস ক্ষমতায় তিনি। এই সময়ে একবারও মুখোমুখি হননি দুই পড়শি দেশের প্রধানমন্ত্রী। মনে করা হচ্ছে, শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হলে এই বরফ গলবে। দাদা নওয়াজের পথে হেঁটে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করার চেষ্টা করবেন। পাক সেনাও হয়তো তখন সীমান্তে অস্ত্র বিরতি স্থায়ী করতে পারে।▪আমেরিকা◆ ইমরান ক্রমেই দূরত্ব বাড়িয়েছেন আমেরিকার সঙ্গে। বিশেষত চীন আর শেষদিকে রাশিয়াকে কাছে টেনে। সরাসরি তাই হুঁশিয়ারি দিয়েছে আমেরিকা। অনেক বার। ইমরান কানে তোলেননি। এবার সেই ইমরানেরই পতন। কিন্তু এই নিয়ে এখন খুব একটা ভাবার সময়ই নেই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ। দক্ষিণ এশিয়ার প্রাক্তন অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট রবিন র্যালফ স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন, ‘আমাদের এখন অনেক মাছ ভাজার আছে। এদিকে তাকালে চলবে না।’