গত ১০ মার্চ ২০২২ চুঁচুড়া রবীন্দ্রভবনে মঞ্চস্থ হল বাগুইআটি সহজিয়া নাট্যসংস্থা প্রযোজিত “জড় আয়ু”। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সুপারসনিক অগ্রগতির সঙ্গে মানুষের বোধের অগ্রগতি হয় না। তাই বোধহয় ঝুপড়ি থেকে শহুরে হাইরাজার জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বত্র ঘটে চলে কণ্যাভ্রূণ হত্যার মতো ঘৃণ্য ও জঘণ্য অপরাধ। কন্যাভ্রূণ হত্যা নামক এক সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা এক প্রতিবাদের নাম “জড়-আয়ু”। “জড় আয়ু” কোনো নাটক নয়, বরং বলা ভালো একটি স্বপ্ন এবং স্বপ্ন ভঙ্গের আখ্যান! এই নাটকের বিষয়-ভাবনা ও সংলাপ এই নাটকের ভরকেন্দ্র। নাট্যকার শ্রী প্রশান্ত সেনের সৃষ্ট নাটকের একক চরিত্র স্বপ্নলতা ও তার অধরা স্বপ্নকে সাফল্যের সাথে তাঁর সুদক্ষ একক অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চে উপস্থাপন করেছেন নাটকের নির্দেশিকা শ্রীমতী অর্ণিশা সেন। স্বপ্নলতার প্রতিটি বয়েসের সাথে অর্ণিশার কণ্ঠস্বরের স্বর-প্রক্ষেপণ, অভিব্যক্তি ও কায়িক অভিনয় নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যাতীত, নাটকের গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবহৃত হয়েছে চারটি মৌলিক গান, যেগুলোর রচয়িতা নাট্যকার প্রশান্ত সেন স্বয়ং। এই চারটি গানের দুটিতে সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন অর্ণিশা সেন নিজেই এবং বাকি দুটিতে শৌর্যদীপ সান্যাল। গানের কথা ও সূর, নাটকের আবহ ও সর্বোপরি শৌর্যদীপ সান্যালের লাইভ গিটার প্রশংসা কুড়িয়েছে উপস্থিত দর্শকদের। নির্দেশিকার আবহ ভাবনায় শব্দ প্রক্ষেপণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে পালন করেছেন ঋকদীপ পাল। নাটকের আবহ সংলাপে জ্যোতিষ্ক চ্যাটার্জী। মঞ্চসজ্জায় তন্ময় মণ্ডল ও জ্যোতিষ্ক চ্যাটার্জী। রূপসজ্জায় মহুয়া সরকার। মঞ্চে আলো-আঁধারী মায়াবী পরিবেশ তৈরি করেছেন আলোক শিল্পী গোবিন্দ কর্মকার। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় অর্পিতা সরকার, মোহনা দাস ও পপি দাস প্রশংসনীয়।এই নাটক সম্পর্কে নাটকটির নির্দেশিকা অর্ণিশা সেন বলেন, “আজ ১০ মার্চ। দুদিন আগে ৮ মার্চ -আন্তর্জাতিক নারী দিবস। জড় আয়ুর উপস্থাপনা সেই দিক থেকে খুবই প্রাসঙ্গিক। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, কন্যাভ্রূণ হত্যাবিরোধী এই নাটকটির একটি পু্রুষের কলমপ্রসূত। নাট্যকার প্রশান্ত সেনকে ধন্যবাদ যে তিনি নিজে পুরুষ হয়ে এই লেখনী আমাদের উপহার দিয়েছেন। ধন্যবাদ এই নাটকের লাইভ গিটারিস্ট শৌর্যদীপ সান্যালকেও। সেও নিজে পুরুষ হয়ে এক নারীর ব্যাথা অনুভব করে সুরমূর্ছনায় ঝঙ্কৃত করেছেন স্বপ্নলতাকে