দার্জিলিং সফরের দ্বিতীয় দিনে কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পেট্রল–ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে নির্বাচন সবকিছু নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেন তিনি। একইসঙ্গে দার্জিলিংয়ের প্রশাসনিক সভা থেকে একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী।আজকের দার্জিলিং এর অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই তিনি পাহাড়াবাসীর পাশাপাশি পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও বার্তা রাখেন আগামী ১০ বছর তাঁরা যেন পাহাড়কে শান্ত রাখেন। সেই সঙ্গে তাঁরা যেন পাহাড়ের উন্নয়নে নজর দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পাহাড়ে সবাই এককাট্টা হোন। শপথ নিন, ১০ বছর কোনও ঝগড়া করবেন না। খুব শীঘ্রই জিটিএ নির্বাচন করতে চলেছে রাজ্য। ভোটের আগে দিল্লির নেতাদের প্রতিহিংসার রাজনীতি করার সুযোগ দেবেন না। ওরা পাহাড়ের ঐক্য ভেঙে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়। আমরা ক্ষমতায় এসে পাহাড়ে হাসি ফুটিয়েছি। রাজ্যের অন্য প্রান্তের মানুষের মত পাহাড়ের মানুষও আজ হাসতে পারছেন। শান্তিতে শ্বাস নিতে পারছেন। পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। আগামী দিন জিটিএ নির্বাচনের মাধ্যমে পাহাড়কে আরও ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে হবে বলে বলেন।’দুপুরের দার্জিলিং এর এই অনুষ্ঠানের আগেই বিজেপি শাসিত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জনবিরোধী নীতি ও তাদের হাতে থাকা ই ডি ও সি বি আই এই দুই এজেন্সী দিয়ে বিরোধীদের চমকানোর প্রতিবাদ জানাতে সব বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আবেদন জানিয়ে বিজেপি বিরোধী দল গুলির নেতৃত্ব ও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি পাঠানোর খবর সামনে আসতেই দার্জিলি এর এই সভা অন্য মাত্রা পায়। গতকালকেই অলপার্টি বৈঠকে জিটিএ নির্বাচন নিয়ে বৈঠক সেরে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এবার সেই পাহাড়ে দাঁড়িয়ে ফের একবার বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার ডাক দেওয়ায় সর্বভারতীয় বিরোধী নেত্রী তার গুরুত্ব পাবে। সেদিকে লক্ষ রেখেই পাহাড়ের এই সভা থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তিনি। মঙ্গলবার দার্জিলিং-এর সভা থেকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘পাঁচ দিনে পাঁচ বার দাম বেড়েছে। এবার মানুষ কী খাবে? বিজেপি খাবে? না দিল্লির লাড্ডু খাবে?’ সেই সঙ্গে ভোটে জিতে আসার পর তৃণমূল সরকার কোন কোন প্রতিশ্রুতি রেখেছে, সেই খতিয়ানও দেন তিনি।মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিজেপি ভোটের সময় বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে, সে সব ভুলে যায়। কিন্তু মমতা উল্লেখ করেন, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করেছে। লক্ষীর ভাণ্ডার, দুয়ারে রেশন, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার খতিয়ান দেন তিনি।এদিন এই প্রশাসনিক সভা থেকে ২১ লক্ষ বিধবাকে ভাতা দেওয়া হয়। এখানেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের উন্নতি হচ্ছে। তাই পাহাড় হাসছে। আর ২০ লক্ষ পড়ুয়ার জন্য ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। ৩ লক্ষ ৮০ হাজার চা শ্রমিকের জন্য বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। পাহাড়ে হিল ইউনির্ভাসিটি গড়ে তোলা হবে খুব শীঘ্রই। দার্জিলিঙে দ্রুত জিটিএ নির্বাচন হবে। ইউক্রেন থেকে ১৭ হাজার পডুয়ারা ফিরেছে। দেশে তাঁদের পড়ার ব্যবস্থা করুক কেন্দ্র।’বগটুই-কাণ্ডের উল্লেখ না করেও বিজেপিকে ওই ইস্যুতেই তোপ দাগেন মমতা। তাঁর দাবি, বিজেপি এমন কিছু করার চেষ্টা করছে যাতে মানুষ পেট্রপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ভুলে যায়। মমতা বলেন, নিজেরাই আগুন লাগায় আর নিজেরাই চীৎকার করে। গেরুয়া শিবিরকে তোপ দেগে মমতার দাবি, বিজেপি পাড়ার ক্লাবে ঝগড়া হলেও কোর্টে চলে যায়।এদিকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি থেকে সরে আসার ঘটনা এবং অবশ্যই মঙ্গল দুপুরে দার্জিলিংয়ের চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে পাহাড়কে আগামী ১০ বছর শান্ত রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা। পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলির ওপর মুখ্যমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ যে ক্রমশ বাড়ছে সেটা যেমন সোমবারের সর্বদলীয় বৈঠকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তেমনি পাহাড়ের আমজনতার মধ্যেও যে মুখ্যমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে সেটা গতকাল এবং এদিনের বেশ কিছু ঘটনায় বোঝা গিয়েছে। দুইদিনই মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে পাহাড়ে আমজনতার ভিড় দেখা যাচ্ছে।এখন দেখার মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় সফর সেরে ফিরে যাওয়ার পর পাহাড়ের এই হাসিমুখ কতদিন বজায় থাকে। না জিটি এ ভোটকে কেন্দ্র করে আবার অশান্ত হয়ে ওঠে