HomeInternationalনীলাঞ্জনা ঘোষের এই লাইনগুলো কে উদ্ধৃতি করে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মধ্য দিয়ে...

নীলাঞ্জনা ঘোষের এই লাইনগুলো কে উদ্ধৃতি করে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মধ্য দিয়ে নারীত্বের উৎসব পালিত হোক এবার।

spot_img
- Advertisement -

নারী তুমি স্বাধীন হয়ো

নারী দিবসের দিনে

নারী তুমি বুঝিয়ে দিও

মা শব্দের মানে

জাতি, ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে মহিলাদের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি জানানোর জন্য এই দিনটি পালিত হয়। এই দিনে প্রত্যেককে নারী অধিকার, লিঙ্গ সমতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হয়। পাশাপাশি মহিলাদের সমান অধিকারের লড়াই জোরদার করা এই দিনটি পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রচলিত সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রঐক্যকে সুসংহত করতে নারীর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে তুলতে হলে নারী সশক্তিকরণ আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হোক। নারী শুধু মা নয়, মেয়ে নয়, ভার্যা নয়, সহোদরা নয়, নারী আমাদের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও। আজ এই প্রতিবেদনে বঙ্গবাসীদের কাছে তাই তুলে ধরতে চাইছি এমনই এক দক্ষিণ ভারতে বসবাসকারী শিক্ষিকা মায়ের ছোট্ট জীবন কে। তাঁর গল্প হয়তো অতটা কঠিন বেদনার্ত নাও হতে পারে। তবে তাঁর লড়াই এবং জেদ, ছিনিয়ে নেওয়ার অধিকার অর্জনের পথ অবশ্যই বলা যেতে পারে। আর এই গল্প জুড়ে থাকবে বিশেষ ভাবে সক্ষম কিছু মানুষের কথাও। যাঁরা সমাজের কাছে ভিন্ন ভিন্ন নামে আজও আখ্যায়িত হয়ে চলছে। এই পথের অন্ত খোঁজার চেষ্টায় তাঁরাও।প্রথমেই বলে রাখি এই গল্পে কোনো টুইস্ট নেই। আর পাঁচজন সাধারণ পরিবারের মেয়ের মতোই তামিলনাড়ুর মাদুরাই অঞ্চলের এক গ্রামে জন্ম সুজাতামালিনীর। পিতা ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মাতা প্রাক্তন পোস্ট মাস্টার শ্রীমতী মথুরাভাল্লি দেবি আজও হাত রেখেছেন কন্যার মাথায়। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে প্রথমে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে অবিনাশলিঙ্গম ইনস্টিটিউটে ভর্তি। ওখানেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, ইন্টিগ্রেটেড স্নাতক এবং সঙ্গে বি-এড, এম-এড স্পেশাল এডুকেশন ও ফিজিক্স নিয়ে উত্তীর্ণ। বিশেষ শিক্ষা নিয়ে প্রথমে তেমন কোনো ভাবনা তাঁর ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে সেই ইচ্ছে ক্রমশ বাড়তে থাকে। তাই চলে আসা তামিলনাড়ু আলাগাপ্পা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি ভর্তির উদ্দেশ্যে। বিশ্ব তখন সদ্য বিংশ শতাব্দী শেষ করে একুশ শতকের প্রারম্ভে। তাই শিক্ষা থেকে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রায় সব ক্ষেত্রেই ভারত বর্তমানের মতো এত আধুনিক হয়ে উঠেনি। এখন যেমন মোবাইলের মাধ্যমে গৃহ শিক্ষা থেকে বিশ্বের সমস্ত গবেষণা হাতের মুঠোয় আমাদের, তখন কিন্তু মোবাইল সাধারণ মানুষের কাছে ডিকশনারির শব্দ শুধু। আর ঠিক তার কয়েকবছর আগেই বিশ্ব জুড়ে প্রত্যেক দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে শেষ হয়েছে সাভানা কনভেনশন। ভারতও আইন করে বিল এনে তৈরি করেছে ভারতের সরকারের স্বশাসিত সংস্থা ভারতীয় পুনর্বাসন দপ্তর। যাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে দিয়ে সামাজিক অন্তভুক্তি। তাই বিশেষ শিক্ষা তখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও প্রকাশ পেলেও ব্যপ্তি বা সামাজিক পরিচয় ও পরিসর তেমন নেই বলাই ভালো। অগত্যা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের অধীনে শুরু করলেন বিশেষ শিক্ষা নিয়ে গবেষণা। তিনবছর পর পিএইচডি শেষ করেই আলাগাপ্পা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগদান। একবছর পর সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে কাজ শুরু। বিশেষ শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষা বিভাগে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারছিলেন না তিনি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের বিশেষ শিক্ষা নিয়ে অনুপ্রাণিত করে স্ব-চেষ্টায় ইউজিসির (ইউনিভার্সিটি গ্রান্ড কমিশন) কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ শিক্ষা পড়ানোর অনুমতি পাবার আবেদন রাখেন। যে কোনো কাজ হৃদয় থেকে ভালবেসে করলে পথ হয়তো এমনিতেই এগিয়ে দিতে থাকে আমাদের। তাই সহজেই ইউজিসির থেকে পাঁচ বছরের জন্য বি-এড ইন স্পেশাল এডুকেশন (দৃষ্টিহীন) অনুমোদন প্রাপ্তি এবং সঙ্গে ৬০ লক্ষ টাকার সাহায্য কোর্স চালানোর জন্য। সফল ভাবে পাঁচ বছর কোর্স সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তিনি আবেদন রাখেন স্বাধীন বিভাগ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকগনও তাঁর ইচ্ছার কাছে পরাজিত হয়ে চালু করেন বিশেষ শিক্ষা ও পুনর্বাসন বিজ্ঞান বিভাগ। শুরু হয় নতুন পথচলা। বিভাগীয় প্রধান হিসেবে ডঃ জে সুজাতামালিনীর জীবনের নতুন যাত্রা। ২০১৬ থেকে আজ পর্যন্ত তারপর আর পিছনে তাকানোর সুযোগ হয়নি তাঁর। একে একে চালু করলেন এম-এড স্পেশাল এডুকেশন, বি-এড স্পেশাল এডুকেশন মানসিক প্রতিবন্ধকতা এবং মনোবিজ্ঞান কোর্স। ছাত্রছাত্রীদের যাতে দূরের বিশেষ বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ না নিতে হয়, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই শুরু করলেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষ বিদ্যালয়। বিভাগীয় উদ্যোগে শুরু করলেন বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও উৎপাদন ইউনিট। ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়া এক শিক্ষার্থীর জীবন আজ বিভাগীয় প্রধান হিসেবে এক বৃহত্তর বিশেষ শিক্ষা ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষের জন্য মায়ের ভূমিকা পালনে বদ্ধপরিকর। বিদেশে গবেষণার কাজে গেলেও থাকতে চান সারাজীবন এই আলাগাপ্পা বিশ্ববিদ্যালয়েই। কাজ করে যেতে চান আজীবন এই শ্রেণীর মানুষদের জন্য। জে সুজাতামালিনী কেবল আজ আলাগাপ্পা বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে নয়, বিশেষ শিক্ষায় অবদানের ক্ষেত্রে তাঁর নাম আজ সারা তামিলনাড়ু রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনিক এবং বিভাগের অধ্যাপনা সমস্তটাই নিপুণ হাতে সামলে চলেছেন প্রতিদিন। এক মা যেমনি ভাবে সন্তানদের আগলে রাখে প্রতিনিয়ত। সুজাতামালিনীও প্রতিদিন তার ছাত্রছাত্রীদের আগলে রাখে সেই ভাবেই। তাঁর স্বপ্নের রূপ ধারণ করেছে তাঁর কথাতেই- সারাবিশ্ব জুড়েই অন্তভুক্তির আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে। বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের লড়াইয়ে নেতৃত্বে কাজ করছে একদল মানুষ। দান নয়, তাঁরা চায় সমান অধিকার। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই সচেতনতা বৃদ্ধি আমাদের বিভাগের প্রধান লক্ষ্য। কোভিদ পরবর্তী বিশ্বে রঙিন হয়ে উঠুক জাতি, ধর্ম, বর্ণ, প্রতিবন্ধকতা নির্বিশেষে সবাই। মুছে যাক আমাদের মনের যত কালো ধোঁয়াশা। আমাদের বিভাগ আমাদের পরিবার। পরিবারের সকল সদস্যরা একত্রে হাতে হাত ধরে চেষ্টা করি সারাবছর ধরেই বিশেষ ভাবে সক্ষমদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতন বৃদ্ধির। শুধু আমরা নই, এগিয়ে আসতে হবে সকলকেই। কোভিদের মারণ ভাইরাস দূর করে মানবতার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ুক সারাবিশ্বে। আমরা স্বপ্ন দেখি একতা, সম্প্রতি, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন। শিল্পের বিকাশেও বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা আগামীতে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে তাঁদের প্রতিভাকে তুলে ধরবে বিশ্ব দরবারে আমরা আশাবাদী। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমাদের বিভাগ সর্বদা প্রস্তুত এই অন্তভুক্তির যুদ্ধে

RELATED ARTICLES
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments