বালুরঘাট ঃ অর্থাভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি বাবা-মা। আর তার বিকল্প হিসেবে ছেলের পায়ে শেকল বেঁধে দিয়েছেন তারা। এমনই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিন দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরের বংগী এলাকার পদ্মপুকুর পাড়ায় । দীর্ঘ কয়েকমাস ধরেই এই চিত্র দেখছেন সাধারন মানুষ কিন্তু নজরে পরেনি প্রশাসনের।যদিও এত অভাব অনটনের মধ্যেও পরিবারের লোকের একটি মাত্র ইচ্ছে চিকিৎসার মাধ্যমে ছেলে যেন ফিরে পায় শেকল মুক্ত জীবন।।কিন্তু শুধু ইচ্ছে থাকলেই তো হয় না এর জন্য চাই প্রচুর অর্থ কিন্তু সে অর্থ তাদের নেই। তবুও যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধি কার্ড ছেলেটির জন্য করে দেবার ব্যবস্থ্যা করে দেওয়া হত। তাহলেও হয়তো সেই প্রতিবন্ধি কার্ডের দ্বারা সুলভে বলে তাকে সুস্থ্য করে তোলার চেষ্টা করা যেত। কিন্তু তা না থাকায় সব দিক দিয়ে ছেলের চিকিৎসা না করাতে পেরে মুষড়ে পড়েছে ওই পরিবারের লোকজন। সুহৃদয় পাড়া পরশিদের সহয়তায় কোনরকমে তাকে সুস্থ্য করে তোলার চলছে পরিবারের লড়াই। তবুও ছেলের অস্বাভাবিকতার আচরনে পাড়ার কোন মানুষের যাতে কোন ক্ষতি না হয় তার জন্য তার জন্য তার পায়ে শেখল পড়াতে বাধ্য হয়েছে পরিবারের লোকজন।বালুরঘাট শহরের বংগী এলাকার পদ্মপুকুর পাড়ায় গেলেই নজরে পড়বে সরু গলির মধ্যে বাড়ির বাইরে নারায়ন দাস নামে এই যুবকের পায়ে পড়ানো লোহার শেকল। চলাফেরা করার সময় ভীষণ কষ্ট হয় তার, কিন্তু বাবা মা নিরুপায়। শিকল বাঁধা পায়ে ইতিমধ্যেই কালশিটে পড়ে গিয়েছে। জীবনের প্রথম দিকটা ঠিক এমন ছিলনা। বাপি একটা সময় আর পাঁচজন ছেলেদের মতই বড় হয়ে উঠছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পাল্টে যায় তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। মানসিক রোগ ধরা পড়ে তার।জমানো সঞ্চয়ের ভরসায় প্রথমে স্থানিও ভাবে ছেলের চিকিৎসা করান পেশায় টোটো চালক বাবলু দাস । কিন্তু পরবর্তী কালে অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা। ফলে দিনকে দিন বাড়তে থাকে তার মানসিক রোগ। বাধ্য হয়েই ছেলের পায়ে লোহার শেকল আটকে দেন পরিবারের সদস্যরা।পেশায় টোটো চালক বাবলু দাস বলেন গত কয়েক মাস ধরে পাড়া-প্রতিবেশীদের যাতে কোন ক্ষতি না হয় বা ও আপন মনে দূরে কোথাও চলে না যায় ।সে জন্যই বাধ্য হয়েই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। সামান্য টোটো চালিয়ে পরিবারের খরচ চালিয়েও ছেলের চিকিৎসা করিয়ে ছিলাম একটা সময়। কিন্তু এখন হাতে পয়সা নেই। অনেকের কাছে গেছি যদি ছেলের একটি প্রতিবন্ধি কার্ড করিয়ে তার সাহায্যে বাইরে গিয়ে ছেলেকে সুস্থ্য করে তুলতে পারি কিন্তু অনেকের কাছে সাহায্যের আবেদন করেও পাই নি।সরকার এগিয়ে এলে ছেলেটাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারব। না হলে কি যে করব ভেবে পাচ্ছি না।অন্যদিকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত স্থানীয় কাউন্সিলর পরিমল কৃষন সরকার জানান , ‘আমার কাছে কেউ আসেনি। এলে তিনি তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করবেন। তার চিকিৎসার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’ঠিক এই ভাবেই দিনের পর দিন পায়ে লোহার শিকল নিয়েই দিন কাটাচ্ছে অসহায় এই যুবক ও তার পরিবার । মাঝে মাঝে হয়তো রাগে-দুঃখে অভিমানে শেকল ভাঙার গান গাইতে চায় নারায়ন । কিন্তু আর্থিক অনটনের ফলেই আর চাপা যন্ত্রণায় গলা বুজে আসে আসে তার। শুধু নির্বাক চাউনি খুঁজে বেড়ায় মুক্তির অনাস্বাদিত আনন্দ কে।