Published by News Bharat 24 hrs / সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ডঃ ইব্রাহিম ইসলাম ( ক্যানাডা , টরেন্টো ) 📀_________________________________________🎙️বিদ্যুৎ বাবু সালাম ৷ আজ আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন নিয়ে এসেছি , কেননা আপনি যেভাবে আপনার লেখালিখি নিয়ে সারাক্ষণ ব্যাস্ত থাকেন ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমাকে আপনার সাক্ষাৎকার নেওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন ! কিন্তু না , কলকাতা ২০২২ বইমেলা”- য় এসে স্থির করলাম আপনার একটা ইন্টারভিউ নেব , বইমেলা শেষের দিন কলকাতার একজন সাংবাদিকের কাছ থেকে আপনার ফোন নাম্বার নিয়ে যোগাযোগটা করেই বসলাম ! মোবাইলে আপনার কাছে মনের ইচ্ছেটুকু প্রকাশ করতেই আপনি রাজি হয়ে গেলেন ! সত্যি বলতে কি একজন উদার চরিত্রের গুণাগুণ একজন প্রকৃত কবির-ই থাকা উচিৎ , সেদিক থেকে আপনি উদাহরণ বলা যেতে পারে ! আপনাকে আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইল ৷ এখন প্রশ্ন হল ;এই মূহুর্তে বিশ্বমানচিত্রে যে জটিল পরিস্হিতি , অমানবিক বর্বরতা নিষ্ঠুরতা নৃশংসতায় লজ্জায় মুখ ঢেকেছে মানবতা , বিদ্যুৎ বাবু আপনি কি মনে করেন এই বহতা বিশ্রী সময়টা একদিন সত্য ও সুন্দরের চেহারা নিয়ে আমাদের একটা ভালো রাস্তা দেখাবে ? 💔 কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক :~অবশ্যই ! আমি সব সময়ই পজেটিভ চিন্তা করি ৷ আসলে কি , এই ছলচাতুরি , কপটতা , আর ভন্ডামি হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক চতুর্যের অমোঘ নিয়তি ৷ এই বিস্তৃত প্রমাণ্যসূত্রিক আলোচনায় , এটাই সুস্পষ্ট হয় যে , রাষ্ট্রসন্ত্রাস, গণহত্যার বর্বরতা চলে এসেছে সেই আদ্যিকাল থেকে ! পৃথিবীর শিল্পী , কবি , সাহিত্যিক , চিত্রকর , ভাস্কর , শিক্ষক ও বুদ্ধিজিবি , এঁরা গান গেয়ে , কবিতা গল্প গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখে , ছবি এঁকে যুগ যুগ ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করে আসছেন এই পৃথিবীটাকে দুষণমুক্ত করার ! সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পাল্টেছে , বদলেছে শয়তানের চেহারা ! ভদ্রতার মুখোশ এঁটে এটা চলিয়ে যাচ্ছে তান্ডাব ! আমরা যারা স্বপ্ন দেখি একটা সত্যি কারের মেঘমুক্ত আকাশ , একটা ফুল আর পাখির কাকুলিতে ঢাকা পৃথিবী ; সেই স্বপ্নকে কিছু ধান্দাবাজ শয়তান তাদের হিংসা ও সার্থপরতা দিয়ে ভেঙে খান খান করে দিচ্ছে ! এটার জন্য আমি বর্তমান রাজনিতিকে দায়ি করবো ৷ তবে এটা বেশি দিন চলতে পারে না , একটা সময় একদিন আসবে যখন আমাদের স্বপ্নগুলো একে একে বেঁচে উঠবে ! আর যারা এই পৃথিবীটাকে কব্জা করতে চেয়েছিল , তাদের অবস্থানগত পরিবর্তন হবেই হবে ! দেখে নেবেন ,—– প্রশ্নকর্তা :~ 🎙️সংস্কৃতি দিয়ে কি এই সমস্যা মিটতে পারে ? 💔 কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক :~অবশ্যই , কেন না ? একসময় ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজরা তল্পিতল্পা গুটিয়ে পেছন হেঁটেছিল কত বিপ্লবী , কত কবি ও গিতিকারদের সৃষ্টি , সাহস এবং সংগ্রামী চেতনার প্রতিভূকে ভয় পেয়ে ! তাই না ? আমি মনে করি , যখন কোন দেশ অন্য আর এক দেশের সাথে যুদ্ধ করে ; তখন এই দু’ই ক্ষমতা লোভি দেশকে আমি কখনোই ভালো এবং সুসভ্য দেশ বলে গণ্য করবো না ! প্রশ্নকর্তা :~🎙️এবার আসছি বিদ্যুৎ বাবু আপনার কবিতা নিয়ে কিছু কথা শুনতে ৷ ( কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক হাসি মুখে বললেন , বলুন ? )বর্তমান পরিস্থিত , সমাজ ব্যবস্থা , মূল্যহীনতা , জাত-পাত , কিম্বা ধর্মটর্ম ; এইসব বিষয় নিয়ে আপনি কি এই মূহুর্তে কিছু লিখছেন , বা লিখবেন বলে চিন্তা করছেন ? 💔 কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক :~দেখুন আমি শুধুমাত্র কবিতা ও ছোটদের জন্য ছাড়া লিখি , তবে সম্পাদকদের আবদার মেটাতে গিয়ে মাঝেমধ্যে গল্পটল্প লিখতে হয় ! আমি মনে করি আমার মত যঘণ্য গদ্যকার অর্থাৎ গল্প লেখক পৃথিবীতে আর আছেন কিনা , সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে ! আমি খুব কমই গল্প লিখি , সেই লেখা যে কবিতার শরীর নিয়ে ফেলে সেটা আমি লেখার আগে অনুধাবন করতে পারি না ! ( মৃদু হেসে ) তবে কবিতাটা আমি খুবই যত্ন , নিষ্ঠা এবং একাগ্রতার সাথে লিখি ! এটা দু’ই বাংলার আমার পাঠক বন্ধুরা র্দীঘদিন ধরে দেখে আসছেন ! প্রশ্নকর্তা :~🎙️ আধুনিক কবিতা নাকি দুর্বোধ্য , আপনি কি মনে করেন ? 💔 কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক :~আসলে কি দুর্বোধ্যতা পাঠকদের অজ্ঞতা বা অযোগ্যতা বলে আমি মনে করি ! কবি বিষ্ণু দে , সুভাষ মুখোপাধ্যায় , বিরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় , প্রেমেন্দ্র মিত্র , শঙ্খ ঘোষ , সুনীল , শক্তি , জয় গোস্বামী , সুবোধ সরকার”- দের এই অপবাদ শুনতে হয়েছে এবং মন্দার , সৃজাত আমাকেও শুনতে হয় ! আসলে কবিতা অনুধাবন করতে গেলে আগে ভিতরকার শিক্ষার প্রয়োজন ৷ এক কথায় পাঠকদের কবিতার শিক্ষার শিক্ষীত হতে হবে , তা না হলে আমাদের কবিতা পাঠকদের মাথার উপর দিয়ে চলে যাবে ! তবে এটা সত্যি , কবিতা বোঝার লোক খুবই কম ! হাতে গুনে বলা যায় ! প্রশ্নকর্তা :~ 🎙️আপনি যে একটা কঠিন রাস্তার উপর দিয়ে দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে একটানা হেঁটে চলেছেন ; এতে আপনার এই কবিতা লেখার ব্যাপারটাকে কখনো একঘেঁয়েমি মনে হয় নি ? 💔 কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক :~না , কখনোই না ৷ আমি কবিতাকে ভালোবাসি , এই ভালোবাসা থেকেই নির্মাণ হয়ে আসছে আমার কবিতারা ! দেশ ও বিদেশের পাঠক বন্ধুরা আমাকে এবং আমার কবিতাকে ভালোবাসেন ৷ আর এক দুই বছর তো আমি লিখছি না , চল্লিশটা বছর ! এই টানা দীর্ঘ চল্লিশটা বছর আমাকে এবং আমার কবিতাকে পাঠকরা সহ্য করে আসছেন ; এটাই আমার কবিতার সার্থকতা বলতে পারি !প্রশ্নকর্তা :~ 🎙️বিদ্যুৎ বাবু এবার বলুন আপনার প্রেম এবং কবিতার ভেতর তার প্রভাব কতটা বিস্তৃত ? 💔 কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক :~আমি বেশ পাকাপোক্ত প্রেমিক বলা যেতে পারে ! সাতপুরুষের সম্পত্তি আগলে রাখার মতোই এই প্রেম ও প্রতিশব্দময় ভালোবাসা”- কে আমি আগলে রেখেছি ৷ আমার প্রেম ? কিভাবে বর্ণনা করবো ভেবে পাচ্ছিনা , তবু প্রশ্নটা যখন করেছেন তখন না বলে পারছি না ৷ আমার জীবনে প্রেম বহু বার এসেছে ও গেছে ! কাছে থেকেছে খুব কম , অনাহুতো অতিথির মতোই ! আমি তখন শ্রীরামপুর হুগলীর পূর্ণচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জুনিয়র ক্লাসে পড়ি ৷ আমার পাশে একই বেঞ্চে শুভ্রা নামে একটা মেয়ে বসতো , ভীষণ সুন্দরী একটা ফুটফুটে মেয়ে ! আমি স্কুলে পড়া পারি বা না পারি , প্রতিদিন ওই ছোট্ট শুভ্রা মেযেটার জন্য স্কুল কামাই করতাম না ! আমাদের ঝিলবাগানের কুসুমকুঞ্জের বাড়িতে আমি আমার জ্যাঠতুতো দাদা-দিদি ও বড়দের কাছে শুভ্রার গল্প করতাম ৷ দাদা , দিদি , ও বাড়ির বড়রা আমাকে ঠাট্টা করে বলতো ; “রানা তোর সাথে শুভ্রার বিয়ে দিয়ে দেব !”— একটা কথা এখানে বলি , আমার ডাক নাম রানা ৷ এই রানা ব’লে বাড়ির সবাই আমাকে ডাকে ৷ ওদের কথা আমি ওই অল্প বয়সে বিশ্বাস করে ফেলে ছিলাম , একটু একটু করে শুভ্রাকে আমি ভালোবেসে ফেলে ছিলাম ! তখন প্রেম বা ভালোবাসা কাকে বলে সেটাই জানতাম না , তবে কিছু একটা যে মনের মধ্যে ঝড় তুলেই চলেছে সেটা অনুধাবন করতাম ! বাড়ির যারা আমাকে বলেছিল শুভ্রার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দেবে , সেই ওদের কথা আমি শুভ্রাকে বলেও ছিলাম ! আমার কথা শুনে ওই মেয়েটা সেদিন এক হাতে মুখ ঢেকে হেসে ছিল ! সে স্মৃতি এখনো আমার অন্তরের অন্তঃস্থলে গোচ্ছিত আছে ! সেই শুভ্রা একদিন স্কুলে আসা বন্ধ করে দিলো ! স্কুলের অন্য সব বন্ধুদের কাছে ওর কথা জিজ্ঞাস করাতে কেউ বলতে পারেনি শুভ্রা স্কুলে আসছেন কেন ! একদিন টিফিন প্রিয়ডে আমাদের স্কুলের কমলবাবু নতুন দিদিমুনিকে কি যেন বলছিলেন , আমি একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম ৷ কান পেতে শুনলাম কলমবাবু বলছিলেন ; শুভ্রা মেযেটার ব্লাড ক্যানসার হয়েছে ও আর স্কুলে আসবেনা ! সত্যি শুভ্রা আর কোনোদিন স্কুলে আসেনি ! ওর বাড়ি কোথায় , সেটাও আমার জানা ছিল না ! মেয়েটা বেঁচে আছে , না মরে গেছে , তাও জানিনা ! তবে এখনো আমার মনের মন্দিরে সেই মিষ্টি হাসি মাখা সুন্দর মেয়েটা এখনো আছে ! এটাই প্রেম , যা আমাকে এই ছাপান্ন বছর বয়সেও অহর্নিশ ডুবিয়ে মারে ! এরপর বড় বেলাতেও প্রেম এসেছে , আবার ফুঁড়ুৎ করে পালিয়েও গেছে ! আমার পরবর্ত্তী সময়ে ওই সব প্রেম”- নানা ভাবে , নানা রূপে কবিতায় এসেছে ! নবনীতা’-কে নিয়ে আমার কবিতার পাঠকদের মধ্যে গুঞ্জন শোনা যায় ৷ আমি নবনীতাকে নিয়ে প্রচুর কবিতা লিখেছি ৷ আমার , কথা না রাখার কথা শীর্ষক কাব্যগ্রন্থে নবনীতাকে নিয়ে বেশকিছু কবিতা আছে ৷ এই নবনীতা কে , কেন , এবং আমার সাথে কি সম্পর্ক সেটা আমি বলতে পারবো না ৷ এটা বলে ফেললে কবিতার মেজাজটাই নষ্ট হয়ে যাবে ৷ তাই না ,—- ? প্রশ্নকর্তা :~ 🎙️এবার আসছি আপনার কাছে কবিতায় উত্তর আধুনিকতাবাদ প্রসঙ্গে ৷ এই ব্যাপারটা যদি একটু খোলসা করে বলেন বিদ্যুৎ বাবু ? 💔 কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক :~এই প্রসঙ্গ নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকে অনেক ভাষণ-টাষণ দিয়েছেন , নানা সাহিত্যধর্মী ম্যাগাজিনে লম্বা লম্বা প্রবন্ধ লিখেছেন পন্ডিত মহল ৷ আমি সেই বিচারে পণ্ডিত- টন্ডিত নই , তবে আমার সামান্য অল্পসল্প পড়াশোনা থেকে এটা বলতে পারি , আসলে আমার যেটা মনে হয় এই উত্তর আধুনিকতাবাদ আধুনিকতাবাদের একটা প্রকারন্ত দিক ! যা গোটা ব্যাপারটাকে সমৃদ্ধ করে । কিম্বা আধুনিকাতার পরবর্তী সিঁড়ি বলা যেতে পারে ৷ কিন্তু আসলে আদৌ সেটা তা নয় ! কারণ এরা পরস্পর বিরোধী পক্ষ ৷ আধুনিকতার মূল উপজিব্য কারণ হল এটা যে সময় , একে আদ্যোপান্ত ধারণ করা ৷ কিন্তু উত্তরাধুনিকতার মূল বিষয়টা হল কোন কিছু ধ্রুব অর্থাৎ সত্য মেনে ধারণ করা যাবে না ৷ ফলে এই ধ্রুবহীনতাকে আদর্শ ধরে যে কাঠামোকে গ্রহণ করা হয় তাকেই বলা যেতে পারে উত্তরাধুনিকতাবাদ ৷ এই মতবাদটিতে লেখকের যে ক্যারেক্টরের কথা বলা হয়ে থাকে তা মূলত লেখকের স্বাধীনতা কিম্বা স্বকীয়তা ৷ কবিতার বিষয়বস্তুই হল বাস্তবতার ভিন্নরূপ ! কেননা কবি তার চারপাশে যেই চিত্র উপলদ্ধি করেন তাই শব্দের মাধ্যমে আঁকেন ৷ তবে বাস্তবতাকে যদি ধ্রুব না মানা যায় তবে কি দরকার কবিতায় ধ্রুবহীনতা ? এটাও কিন্তু সত্যি এই সব ব্যাপার ট্যাপার নিয়ে বেশি ভাবলে কিন্তু আসল দিকটায় ফাঁক থেকে যাবে ৷ সেটা হল কবির কলম দিয়ে কবিতা নির্মাণ না হয়ে ব্যাকরণ ট্যাকরণ শব্দ ও অক্ষরে গড়ে উঠবে ৷ আমি বিশ্বাস করি কবিতা মূলত সমাজ ও শিল্প গঠনের উপর নির্ভর করে নির্মাণ হয় ৷ আবার এটাও সত্য কবিতা কিন্তু গঠন নির্ভর নয় ৷ কবিতা হল বিষয় আর ভাব নির্ভর ৷ বাস্তবতার কল্পনা জ্ঞান দ্বারা যে নির্মাণ কাজ সাধিত হয় সেটাই কবিতা ৷ আমরা কি আগের কোন কবির কবিতা ফেলে দিতে পারবো , কিম্বা তাঁদের সৃষ্টি নিয়ে বিদ্রুপ করতে পারি ? অবশ্যই নয় ৷ যেটা পারি তা কেবল কবিতার ভিন্নধারা নির্মাণ করতে ৷ এইজন্যেই কবিতা আধুনিক বা পুরাধুনিক হয় না ৷ আধুনিক কিম্বা পুরাধুনিক হয়ে যার কবিতার শব্দ , গঠন , ভাষা আর তার সময়ের প্রেক্ষাপট ৷ প্রশ্নকর্তা :~ 🎙️বর্তমান প্রজন্মের কবিদের প্রতি আপনার কি বার্তা , যদি বলেন ? 💔 কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক :~নতুন বা নবীন যারা , তাদের লেখা আমি খুব মন দিয়ে পড়ি ৷ ওরা খুব ভালো লিখছেন ৷ আমার হুগলীর শ্রীরামপুরের ছায়ানীড়”- এর বাড়িতে বেশ কিছু নতুন কবি তাদের কবিতা শোনাতে আসেন , আমি ওদের কবিতা শুনে মুগ্ধ হই ! ওদেরকে একটা কথা বলবো , নিজেদের পায়ের নিচের মাটিকে শক্ত করে তবেই এই কবিতা চর্চার দিকে ঝুঁকতে ৷যাই হোক , সবাই ভালো থাকুন , সুন্দর ও সুস্থ থাকুন ৷প্রশ্নকর্তা :~ 🎙️বিদ্যুৎ বাবু একটা বিশেষ কথা আপনার কাছে জানতে চাইছি , সেটা হল কবিতার চিত্রকল্প ৷ এই বিষয়টা নিয়ে যদি বিস্তারিত কিছু বলেন ? 💔 কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক : ~হ্যাঁ খুব ভালো প্রশ্ন করেছেন ইব্রাহিম বাবু ৷ দেখুন , গোটা জীবনটা ধরে মস্ত মস্ত মোটা মোটা বই লেখার চাইতে , আমি মনে করি একটা সত্যি কারের রিয়্যালিষ্টিক অর্থাৎ সার্থক চিত্রকল্প নির্মাণ করা অনেক ভালো ! তাই না ? It is better to present one image in lifetime than to produce voluminous work I এটা আমার কথা নয় , এটা এজরা পাউন্ড এর প্রণিধানযোগ্য বাণী ! এই চিত্রকল্প বিষয়টা কি ? উপমা ও চিএকল্প ব্যাপারটা কি এক ? কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন ; উপমাই কবিত্ব ৷ উপমার মধ্যে চিত্র থাকলেও চিএকল্প ও উপমা কখনোই এক হয় না ৷ কবিতা রচনার মধ্যে কবির বুদ্ধিমত্তা ও আবেগের সংহতিকে যা একটা বিশেষ মুহূর্তে কবিহৃদয়ে জাগিয়ে তোলা ! কিন্তু এই ইমেজ কবির মনে জন্ম নেয় কিভাবে ? কবিকে আগে শব্দের দীক্ষা নিতে হবে ৷ শব্দ একটা কন্সেপ্ট concept অর্থাৎ ধারণার প্রতীক , এটা কিন্তু সর্বাগ্রে কবিকে অনুধাবন করতে হবে ৷ এরপর কবিকে শরীর , মন , প্রাণ দিয়ে বিশুদ্ধ থাকতে হবে ! তবেই তাঁর দর্শন আরও শক্তিশালী হবে ৷ সাম্প্রতিক বাংলা কবিতায় চিত্রকল্পের যে বহুল প্রয়োগ দেখা যায় , “ইমেজিষ্ট” আন্দোলনের পরোক্ষ প্রভাব থেকেই সেটা এসেছে ! কবিতায় জীবনের গভীরার্থ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভাঙাচোরা সময় থেকে সুস্থিতি ফিরে পাওয়ার আত্যান্তিক তাগিদ আমি অহর্নিশ উপলব্ধি করি ! যাই হোক , এটুকুই বললাম ৷ আগামী দিনে কবিতার চিত্রকল্প”- এই বিষয়টা নিয়ে আরও বিস্তারিত বলার ইচ্ছা রইল ৷ প্রশ্নকর্তা :~ 🎙️বিদ্যুৎ বাবু , আপনার কাছে অনেক কিছু জানতে পারলাম ৷ আপনি যে আমাকে এতোটা সময় দিয়েছেন এর জন্য আপনার প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা ৷ 💔 কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক :~না না ওসব কিছু নয় , আমি যতটুকু জানি সেটাই আপনাকে বললাম ৷ তবে কবিতা লেখা খুবই কঠিন কাজ ৷ আমি মনে করি একটা কবিতার একটা লাইন আমৃত্যু একজন মানুষ তাঁর অন্তরের অন্তঃস্থল দিয়ে বয়ে নিয়ে বেড়ায় ! ওই এক লাইনই আমি প্রকৃত কবিতা বলে মনে করি ৷ যাই হোক , এবার আমাকে উঠতে হবে তার কারণ কলকাতার একটা এফ এম রেডিওতে আমার স্বরচিত কবিতা বলার আমন্ত্রণ আছে ৷ ইন্ডিয়াতে আবার এলে অবশ্যই আমার শ্রীরামপুর হুগলীর ছায়ানীড়”- এর বাড়িতে আসবেন কিন্তু ৷ এবার আমাকে উঠতে হবে ইব্রাহিম বাবু , তার কারণ কলকাতার একটা বেসরকারিরেডিও এফ এম চ্যানেলে আমার কবিতানির্ভর একটা সাক্ষাৎকারের রেকডিং আছে ৷ উঠি , আবার সময় সুযোগ হলে আবার সাক্ষাতে কথা হবে ইব্রাহিম বাবু ৷📀[ এতক্ষণ দু’ই বাংলার প্রখ্যাত প্রখ্যাত কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক এর মুখোমুখি বাক্যালাপ করছিলাম ! ভীষণ অমাইক মানুষ আমাদের প্রিয় কবি ৷ আমাকে তাঁর শ্রীরামপুরের ফিরিঙ্গি ডাঙা লেন”- এর ছায়ানীড় বাসভবনের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে বলে ছিলেন ; “আবার কিন্তু ইন্ডিয়াতে এলে আমার এই বাড়িতে আপনার আসা চাই’ ৷ কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক এর সাথে এই আন্তরিক সাক্ষ্যৎ- কার আমার জীবনে একটা পরম সম্পদ হয়ে থাকবে ৷ ] 📀 💔 স-মা-প্ত 💔 ___________________________________________