________________________________________
একক একাত্তর
________________________________________
মধ্যবর্ত্তী পথে
একাত্তর’- এর হাওয়া একা , তবুও যেভাবে বিছিয়ে দিয়েছি অমলিন রক্তের দাগ ; সবটুকু ভালবাসা পালিত কাব্যের ব্যাকরণে !
এই মাটি নিয়েছে চিনে কবরের লাশের ঘুম ; তবু বাসকক্ষে নীরবতা আঁকা হয়েছে শ্রদ্ধার রঙ দিয়ে ,….
চেনা মুখের ঢল ; অন্য কোন শব্দের বর্ণপরিচয় দর্পণে শৈল্পীক সৃজনে কথা বলে , তবু মধ্যবর্ত্তী রাস্তায় কেউ একজন উন্মাদ ভোর রাতে ২১শে ফেব্রুয়ারী বলে আজান দিয়ে ওঠে !
________________________________________
স্বপ্নদ্বীপ এবং অন্যান্য নিরীহ শব্দেরা
________________________________________
যেটুকু বাকি ছিল
তার সবটা দিয়ে সময়লগ্নের তিথিক্ষণে মৃত্যু ঠেকানো কবচ গড়লাম ; তবু সে অপঘাতে অকস্মাৎ মরলো ! ছেলেটা যাদের জ্বালায় মনে মনে এতকাল জ্বলছিল ; সেই সব বকে যাওয়া অসভ্য ঘৃণ্য ছেলে গুলোর অন্যায় – অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মৃত্যু নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো চির দিনের জন্য !
দেখে নিও সময় ওদের ক্ষমা করবে না , …..
এখন শহরের সব রাস্তায় চিরকালের অসুখ ; এখানে নির্বোধ হয়ে ঘুরছে স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যু নিয়ে আলোচনা , …..
অন্য দিকে ব্যাথা নিংড়ানো মন নিয়ে আসে-পাশের রাস্তায় কেউ – কেউ ওই সব কুচক্রি বর্বর হিংস্র অকর্মণ্য জানোয়ারদের ভয়ে ভেতরে ভেতরে নিঃশব্দ নিরবতা নিয়ে চুপ করে ছিল ! এটাই ঘটে যাওয়া বহতা সময়ের করুণ পরিণতি ; সেই কারণে প্রতিবাদ – সভা – সমাবেশ দিন কেটে যাচ্ছে সংবাদে সংবাদে এভাবে চিরাচরিতের মত ! অন্যদিকে দল বাঁচানোর কৃত কৌশল পরিপাটি উক্তি কিম্বা তর্ক-বিতর্ক টিভিতে টিভিতে ; এরই মধ্যে নানান বিজ্ঞাপন রিরোতি ! কী এক দুর্বোধ্য স্বপ্নের মত লাগছিলো স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যুটা ; যাদের কারণে ছেলেটা অকালে শেষ হয়ে গেল সেই সব খুনি ইপ্টেজারদের জন্য অগুন্তি ছি ছি কিম্বা নতুন আবিষ্কৃত খিস্তি-টিস্তি পরিপটি ভব্যতায় দিয়েছি কত – শত বার ; প্রকাশ্যে নয়তো মনে মনে ! স্বপ্নদ্বীপের নির্মোহ মাখা গাঢ় নিঃসঙ্গ ছায়া-ছায়া অস্পষ্ট কায়া অস্ফুটে বলতে চেয়েছে “আমাকে মেরোনা , আমি বাঁচতে চাই , আমাকে বন্ধুরা বাঁচতে দাও ! যারা ছেলেটাকে মারলো ; এদের জন্য বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে কেঁদেই চলেছে অহর্নিশ ,…. ভেতর থেকে নির্জন রাতের অন্ধকারে সভ্য-ভদ্র সেজে থাকা ছদ্মবেশী বর্বর জানোয়ার গুলো মাথা উঁচু করে প্রকাশ্যে ঘুরছে ফিরছে হাসছে নির্ভয়ে কথা বলছে বিদ্যাস্তম্ভের চাতালে !
চিত্রপট এভাবেই বদলে যায় , গেছে সময়ে ; বিচ্ছিরি স্বপ্ন নিয়ে মজে আছে এ দেশের প্রতিটা ঘর – বাড়ি এবং অন্য কোনো অন্তরের অন্তঃস্থল ! তবু উদ্ভিন্ন চোখের ভাষায় ভালোবাসা মাখা মন আমার মতো প্রতিবাদি বোকাকে নরকে পাঠায় !
শেষবার এই রাজপথে
গত জন্মের আয়না ভাঙার শব্দ পেয়েছিল স্বপ্নদ্বীপ ! ওর মৃত চোখ দুটো নিষ্পলক ছিল অনেকটা সময় ধরে , সেখানে মৃদু কান্নার চাপা আওয়াজ কেউ শুনতে পায়নি ; শোনার চেষ্টাও করেনি !
________________________________________
_______________________________________
পরবাস্তব এবং হৃদয়তান্ত্রিক পদ্য
_______________________________________
চোখের কাছে অচেনা সর্বনাশ
ভেতর থেকে দৃশ্যের বিচ্ছেদ
মনের মধ্যে যন্ত্রণার অলি-গলি
নামহীন যত কান্নার নির্দেশ !
এখন থেকে অন্তরে তুমি থাক ; বিম্বা অতলে হৃদয় মেলে রাখ ….
এইবেলা যদি স্পর্শে ওঠো কেঁপে , আকাশ থেকে বৃষ্টি আসুক ঝেঁপে ,—
গভীরের সুখ সময়ের পথ ধরে
চলতে – চলতে কোন অতলান্ত ভোরে
স্বপ্নের কথা নিজেকে বলতে – বলতে ; ঘুম ভেঙে যায় মনের অজান্তে !
কোথায় যেন পুড়ছে অচেনা স্মৃতি , মিথ্যে – মিথ্যে বিষণ্ন দুটি চোখ ,—-
কোথায় যেন নামহীন পৃথিবীতে
ভোরে আছে যত মৃত্যুর প্রতিশোধ !
হঠাৎ যদি ফুল – পাখি – চাঁদ দেখে ; সময়ের সাথে একা একা পথ চলি ,—-
কবিতার কাছে আশ্রয় খুঁজে নিয়ে ; তিন প্রহরের যন্ত্রণা তাকে বলি !
এসব কথা আত্মায় ঘোরে – ফেরে ; তবুও কেন মন বোঝে না তাকে ,—– চতুর্দিকের অগণন স্মৃতিগুলো আদিগন্ত ভালোবাসা হয়ে থাকে !
চলে যাব ব’লে চোখ ভিজে আসে জলে ; চুপচাপ শুধু নীরবতা নিয়ে থাকি ,—-
চেনা – অচেনার অনেকেই কাছে থাকে
মৃত্যুর পাখি করে যায় ডাকিডাকি !
নতুন ক’রে আসব আবার ফিরে ; ডাকবে কাছে নতুন নামে যখন , সেই পুরাতন স্মৃতির ফাঁকে – ফাঁকে
আগের আমিকে পড়বে কি মনে তখন ?
______________________________________
বৃষ্টি বিন্দু ও আমি
_______________________________________
অন্যথায় রূপ বদলে যায় বেমালুম অর্ধেকনিঃশব্দে ; বৃষ্টিবিন্দু গুলো কিছুটা অদ্ভুত কিম্বা ঝাপসা অশরীরী !
অভিন্ন যা কিছু সবটাই নীরবতার রঙে অপ্রমেয় রঙিন ; তবুও রাস্তার ভেতর চলে জন্ম – মৃত্যুর দাম কষাকশি ! অন্য রাতেরা এভাবেই অনাত্মীয় সেজে দৃশ্য হারায় এই ঘরে ,— কেবল চলে যাবার সময় এলে আমি মরি অন্য চিন্তায় !
এভাবে উদাস সবটুকু জন্মের স্বপ্নগুলো ; দিনরাত মনে মনে চলে গূঢ় আলোচনা ,— স্পষ্টতই চোখের মধ্যে এভাবেই যাবতীয় স্তব্ধতা পুষে রাখে নির্ঘুম দর্পণের আমিটা !
_________________________________________
এক নামহীন স্টেশনে আমি
_________________________________________
একমাত্র ঈর্ষণীয় কিছুর জন্য ভেতরে ভেতরে মন নিয়ে পুড়ছিলাম ; অথচ সেই এক রাস্তায় বহুবার মৃত্যু এসে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গেছে অপ্রমেয় এক নামহীন স্টেশনে ! তখন ঠিক স্বপ্ন ছিল .ঘুমহীন রাতগুলোর কাছে , …. যদিও আমি যতটা যেভাবে এতকাল ধরে ক্ষয়েছি ;
তবু মৃত্যুর খবর টুকু অনুধাবনে মনকে সক্ষম করে নি একবারও ! শেষ পর্যন্ত ঐ যে চেনা মুখ , চেনা শরীর , ঘর-বাড়ি , হৃদয় ছড়ানো রাস্তা , কিছু কিছু সুখ ; এদের মধ্যে বহু পুরুষের জন্মের দাগ নিয়ে আমি একজন ! এই আমি হাওয়াময় একক এভাবেই , ….. নজর ছড়ানো পাপ , তাপ , দুঃখ এবং বিরহ ; বেশ কিছু নতুন নতুন অসুখ পোড়া প্রহরের স্মৃতি বিজড়িত ! এই আমিটার মধ্যে আদ্যোপান্ত জন্মগত , ……
অন্তঃস্থলে নির্ঘুমের আঠা লেগে আছে ! রক্তের ভেতর ঘুরছে গত জন্মের স্মৃতি হয়ে যাওয়া চেনা মুখ গুলো ,
এই পাঁচকোনা ঘরে আমি দরজার পাল্লা ধরে দাঁড়িয়ে বহুদিন বান্ধবহীন একা ; তবুও তাকিয়ে থাকা খোলা চোখে বেশ কিছু ভালোবাসার শূন্যে ওড়াউড়িতে তালিয়ে যাই , ……
আমি এভাবেই মৃত্যুর কাছে ঋণী ! মধ্যরাতে নিঃশব্দে এভাবে চুপিসারে মনের ক্যানভাসে আঁকি নদীর তরঙ্গ ; জলের দর্পণে ভাসে রমণীর জটিল লাস্য ৷ এভাবে কত রাতের অন্ধকারের মধ্যে মৃত্যুর সম্মুখে শোকশীর্ণ হয়ে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার ইহকালের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি ! এটাই আমি ; আমার দীর্ঘশ্বাসের গন্ধ সমর্পণ করতে তারা খসা আকাশটাকে ! অথচ নবনীতা নাম্নী নারীটি খারাপ ইঙ্গিতে নিরস্ত্র করেছে অলৌকিক ক্ষমতায় ম্যাজিক ফিগারের কল ঘরের স্নানের দৃশ্য দেখিয়ে !
শেষটুকু ভীষণ কষ্ট করে লিখেতে হয়েছে ! রাতের ভেতর আমার পশ্চাৎদেশের ছায়া বালি-সিমেন্ট খসা দেওয়ালে অমাইক সভ্যতা নিয়ে স্থির হয়ে জেগে আছে ,……
এই মৃত্যু কতবার সিঁড়িভেঙে অসাবধানে নিচে নেমে গেছে ; আমিও ডুবেছি বহুবার প্রায়ই ৷ হৃদয় যেখানে নিছক এঁকেছে কল্পনায় আমার অতীতের নারী মুখ গুলো ; সেই সব দিনগুলো মৃত্যুর ভেতর ফিরে আসে হঠাৎ করেই অজান্তে ! শেষে কারা যেন ঐ শ্মশানের কাছে এসে ফুল চন্দনের সোহাগ মিশিয়ে আমার শ্বাস-প্রশ্বাস হীন শরীরে আগুন এঁকে দিতে দিতে বলে ওঠে ; এবার তুমি সোজা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে স্মৃতি হয়ে ওঠো ! এবার তোমার কায়াহীন আজন্মের বিশ্রাম ! ভালো থেকো ; ওঁ শান্তি ! ওঁ শান্তি ! ওঁ শান্তি সর্ব ভূতেষু নমঃ !!
_________________________