আজ মন্দারমনি সিবিচে ইসকনের উদ্যোগে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হলো ভীষ্ম পঞ্চমী ব্রত উৎসব। সমুদ্রের পাড়ে সূর্যোদয়ের সময় থেকেই শুরু হয় পবিত্র যজ্ঞ, কীর্তন ও তর্পণ কার্যক্রম। ভক্তরা ভোরবেলা স্নান করে গঙ্গাজল ও ফুল নিবেদন করেন ভগবান বিষ্ণু ও ভীষ্ম পিতামহের উদ্দেশ্যে।
ভীষ্ম পঞ্চমী ব্রত, যা অনেক স্থানে ভীষ্ম পঞ্চক বা ভীষ্ম পঞ্চম ব্রত নামে পরিচিত, হিন্দু ধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র ব্রত। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে পালিত এই দিনটি মহাভারতের মহাবীর ভীষ্ম পিতামহের স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনেই ভীষ্ম পিতামহ শরশয্যায় শায়িত অবস্থায় গঙ্গাতীরে ইচ্ছামৃত্যু বরণ করেন।
পৌরাণিক প্রেক্ষাপটে জানা যায়, কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ শেষে ভীষ্ম পিতামহ সূর্য উত্তরায়ণে প্রবেশের পর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শেষ সময়ে ভগবান কৃষ্ণ, যুধিষ্ঠির ও পাণ্ডবগণ তাঁর কাছ থেকে ধর্ম, রাজনীতি, ন্যায়নীতি ও জীবনের দর্শন বিষয়ে অমূল্য জ্ঞান লাভ করেন। সেই স্মৃতিতেই প্রতি বছর এই ব্রত পালিত হয়, যা ভক্তদের কাছে আত্মশুদ্ধি, পিতৃভক্তি ও ধর্মনিষ্ঠার প্রতীক।
আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইসকন ভক্তবৃন্দ ও পর্যটকরা গঙ্গা স্তব, গায়ত্রী মন্ত্র ও ভগবদ্গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন। ইসকন সংগঠকবৃন্দ জানান, “ভীষ্ম পিতামহের আদর্শ আমাদের জীবনে ন্যায়, কর্তব্য ও ভক্তির শিক্ষা দেয়। সমুদ্রতীরে এই আয়োজনে আমরা ভক্তি ও শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি।”
অনুষ্ঠান শেষে সমুদ্রপাড়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রণাম ও তর্পণ পর্ব, যেখানে উপস্থিত ভক্তরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল ও তিল অর্পণ করেন। ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী, এই দিনে ভীষ্ম পিতামহের তর্পণ করলে জীবনের সকল বাধা দূর হয় ও সংসারে স্থিতি আসে বলে বিশ্বাস করা হয়।
কুরুক্ষেত্র, প্রয়াগরাজ ও গঙ্গাসাগরের মতোই এ বছর মন্দারমনিও ভক্তিময় আবহে ভীষ্ম পঞ্চমী ব্রতের সাক্ষী থাকল। ভীষ্মের ত্যাগ, প্রতিজ্ঞা ও ন্যায়পথে অটল থাকার আদর্শের স্মরণে আজকের এই অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে ভক্তি, ধর্ম ও মানবতার এক সুন্দর মিলনক্ষেত্র।




