নিজস্ব প্রতিনিধি(সতী কুমার): শেখ হাসিনার জমানায় বাংলাদেশের হিন্দুদের কতটা দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে ফের তার জলজ্যান্ত প্রমাণ সামনে এসেছে। অবিবাহিত এক হিন্দু শিক্ষককে বিয়ে করার জন্য ৩০ দিনের চরম সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক। ওই সময়সীমার মধ্যে বিয়ে না করলে হিন্দু শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি জানাজানি হতেই হুলস্থুলু পড়ে গিয়েছে। প্রধান শিক্ষকের হুমকির পরে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন হিন্দু শিক্ষক। বিষয়টি নজরে আসার পরেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা আধিকারিক নাজনীন সুলতানা। বিয়ের জন্য নোটিশ ধরানোর ঘটনাটিকে লজ্জাজনক আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পদে যোগ দেন রনি প্রতাপ পাল। শিক্ষক হিসেবে পড়ুয়া থেকে শুরু করে অভিভাবকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় রনি প্রতাপ। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু আচমকাই বিপত্তি। গত ২৬ জুলাই হিন্দু শিক্ষক রনি প্রতাপকে এক নোটিশ ধরান স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ নজরুল ইসলাম। ওই নোটিশে তিনি লেখেন, ‘আপনি ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর অত্র বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) পদে যোগ দেন। যোগ দেওয়ার পর অবগত হলাম আপনি অবিবাহিত। পরে আপনাকে বার বার মৌখিকভাবে তাগিদ দিয়েছি বিয়ে করার জন্য। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও আপনি বিয়ে করেননি। বিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষা চালু রয়েছে। অভিভাবকরা অবিবাহিত শিক্ষক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন।সুতরাং বিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ কর্ম দিবসের মধ্যে বিবাহের কার্য সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হল।’ওই নোটিশ পেয়েই মাথায় হাত পড়ে রনি প্রতাপের। গত ২৮ জুলাই নোটিশের জবাবে তিনি প্রধান শিক্ষককে লেখেন, ‘আমার অভিভাবকরা আমার বিয়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের বিয়ের পাত্রপাত্রী বাছাইয়ে গোত্র বা বর্ণের বিষয় রয়েছে। তাছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রাবণ থেকে কার্তিক পর্যন্ত বিয়ে করাটা শুভ মনে করেন না। সুতরাং- পারিবারিক ও ধর্মীয় রীতির কারণে আগামী অগ্রহায়ণ মাসে আমার অভিভাবকরা, আমাকে বিয়ে করাবেন বলে জানিয়েছেন।’ যদিও ওই চিঠি পাওয়ার পরেও সমানভাবে রনি প্রতাপকে বিয়ে করার জন্য হুমকি দিয়ে চলেছেন প্রধান শিক্ষক। শেষ পর্যন্ত গত ৩০ জুলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা আধিকারিকের কাছে লিখিতভাবে প্রধান শিক্ষকের নোটিশের বিষয়টি জানান রনি প্রতাপ। ওই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে।