নিজস্ব প্রতিনিধি(রজত রায়):ভারতীয় টেস্ট দল যে থেকে বাদ পড়েছেন তখনও জানতেন না ঋদ্ধিমান সাহা। কালীঘাট ক্লাবের নেটে ডুবে ছিলেন ব্যাটিং অনুশীলনে।বোলারদের বলে দিচ্ছিলেন কেমন বল করতে হবে তাঁকে। অনুশীলন থেকেই পরিস্কার, বাংলার উইকেটরক্ষকের পাখির চোখ এখন আইপিএল। প্রায় ঘণ্টা খানেক অনুশীলন শেষে জুনিয়র ক্রিকেটারদের নানা পরামর্শ দিলেন। তারপর মুখোমুখি হলেন প্রশ্নের। কানপুরের ইনিংসের পর দাদি (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) হোয়াটস অ্যাপ করেছিল। বলেছিল, আমি যত দিন আছি ভাবতে হবে না। নতুন করে উৎসাহ পেয়েছিলাম।প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজের জন্য দলে আপনাকে রাখা হয়নি। কী বলবেন?ঋদ্ধিমান: তাই? দল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে? কখন হল? কী দল হল? (সাংবাদিকদের কাছেই দেখলেন দল। মাস্কে হতাশা ঢেকে বললেন, বলুন কী জানতে চান)প্রশ্ন: আপনাকে কি আগে জানানো হয়েছিল, দলে থাকবেন না? নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মা তেমনই দাবি করেছেন।ঋদ্ধিমান: হ্যাঁ, চেতন জানিয়েছিলেন, আমাকে শ্রীলঙ্কা সিরিজের ভারতীয় দলের জন্য ভাবা হচ্ছে না। জানতে চেয়েছিলাম, শুধুই কি শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য? উনি বলেছিলেন, এখন থেকে আর আমার কথা ভারতীয় দলের জন্য ভাবা হবে না। আমাকে অন্য রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শও দেন। রাহুল ভাইও (রাহুল দ্রাবিড়) আমাকে দলে না রাখার কথা বলেছিলেন।প্রশ্ন: কেন বাদ দেওয়া হবে জানতে চাননি?ঋদ্ধিমান: চেয়েছিলাম তো বটেই। চেতন আমাকে বলেন, ফিটনেস বা পারফরম্যান্সের জন্য আমাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না।নতুন উইকেটরক্ষকদের দেখতে চাইছেন নির্বাচকরা। নতুনদের সুযোগ দেওয়ার জন্যই আমাকে রাখা হবে না। আমি তো প্রথম একাদশে থাকতামও না। তাই হয়তো এমন ভাবনা ওঁদের।প্রশ্ন: কবে জানানো হয় আপনাকে?ঋদ্ধিমান: রঞ্জির দল গঠনের আগে চেতন আমাকে বাদ দেওয়ার কথা বলেন। বলেছিলেন রঞ্জি খেলতে। তখন তো রঞ্জি শুরুই হয়নি!আমি এ বার পারিবারিক কারণে রঞ্জি না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটা সকলেই জানেন। খেলেই বা কী হত? রহাণে তো শতরান করল। তাহলে ওকে কেন দলে রাখল না? প্রশ্ন: চেতন বলেছেন আপনার রঞ্জি না খেলার বিষয়টি আপনি এবং সিএবি বুঝবে। রঞ্জি না খেলা মানে তো নিজের হাতেই ফেরার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া।ঋদ্ধিমান: দেখুন, দীর্ঘ দিন জৈব বলয়ের মধ্যে খেলতে হচ্ছে। সব সময় পরিবারকে কাছে রাখা সম্ভব হয় না। পারিবারিক কারণেই রঞ্জি খেলছি না।এর মধ্যে অন্য কারণ নেই। পরিবারকে একটু সময় দিতে চাই। আর বলেই তো দেওয়া হয়েছে আমার কথা আর ভাবা হবে না। ফেরার সুযোগ কোথায়?প্রশ্ন: তাহলে কি আপনার বয়সই কারণ?ঋদ্ধিমান: বয়স কারণ হলে তো অনেকেরই দলে থাকার কথা নয়। আমার বয়সের বা কাছাকাছি বয়সের অনেকেই তো দলে আছে।হয়তো আমি কারোর সঙ্গে আলাদা করে যোগাযোগ বা সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করিনি বলেই আমাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সব সময়ই শুধু নিজের কাজটা করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। বাকিটা নির্বাচকদের হাতে।প্রশ্ন: চেতন আপনাকে অন্য রকম কী ভাবার কথা বলেছিলেন? অবসর?ঋদ্ধিমান: হতে পারে। উনি কী ভেবে বলেছিলেন বলতে পারব না। কিন্ত অবসর কবে নেব, সেটা আমার সিদ্ধান্ত। কারোর কথায় অবসর নেব না। যত দিন খেলতে ভাল লাগবে খেলব। নিজের ভাল লাগা থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলাম। যত দিন ভাল লাগবে তত দিন খেলব।প্রশ্ন: কানপুরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে লড়াকু ৬১ রানের পর আপনাকে প্রথম একাদশে সুযোগ না দিয়েই বাদ দেওয়া হল!ঋদ্ধিমান: হ্যাঁ, দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাকে খেলানো হয়নি। কানপুরে ঘাড়ের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েই দলকে জেতার মতো জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলাম। দেখুন, আমি সব সময় দলের জন্য খেলেছি।৪০টা টেস্টে কখনও ব্যক্তিগত স্বার্থে খেলিনি। দলের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে খেলেছি। নিজের স্বার্থে খেললে আমার পরিসংখ্যান অনেক বেশি ঝকঝকে হতে পারত। তা হলে আবার হয়তো আমাকে স্বার্থপর ক্রিকেটার বলে বাদ দেওয়া হত।প্রশ্ন: খারাপ লাগছে না?ঋদ্ধিমান: খারাপ তো অবশ্যই লাগছে। কিন্তু কী করা যাবে। কানপুরের ওই ইনিংসের পর দাদি (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) হোয়াটস অ্যাপ করেছিল। বলেছিল, আমি যত দিন আছি, ভাবতে হবে না। দাদির কথায় নতুন করে উৎসাহ পেয়েছিলাম। কিন্তু…।প্রশ্ন: ভারতীয় দলে কোচ, অধিনায়ক পরিবর্তন হয়েছে। নতুনদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কি কোনও সমস্যা হয়েছে?ঋদ্ধিমান: না না। আমার সঙ্গে কারও কোনও সমস্যা নেই। আমি নিজের মতোই থাকতাম। আলাদা করে কারও সঙ্গে কখনও সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করিনি।প্রশ্ন: আপনাকে বাদ দেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছিল, আগে কেন বলেননি?ঋদ্ধিমান: দেখুন, নতুন দল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আমি ভারতীয় দলের অংশ। আমাকে বাইরে বলতে বারন করা হয়েছিল।দলের শৃঙ্খলা ভাঙতে পারি না। কিন্তু এখন তো আমি বাইরে। বলতে আর সমস্যা নেই।প্রশ্ন: বাদ পড়ার পর কি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন?ঋদ্ধিমান: না না। প্রশ্নই নেই। এমনিতেও দাদির সঙ্গে আমার খুব বেশি কথা হয় না। আর বাদ গিয়েছি বলে কাউকে বলতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমি ওরকম মানসিকতার ছেলে নই।২০১০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নাগপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম বার ভারতের হয়ে মাঠে নেমে ছিলেন ঋদ্ধিমান।