কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগ হতে ডক্টরেট করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ডঃ জিনবোধি ভিক্ষুর বিরুদ্ধে নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে তোলপাড় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, ৮ মার্চ নারী দিবসের দিনে ঘটে যাওয়া এক বেদনা দায়ক ঘটনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার থেকে শিক্ষায় একুশে পদক প্রাপ্ত এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগ হতে ডক্টরেট ব্যক্তির দ্বারা এক নারীকে “বেইশ্যা” বলে অবহিত এবং শাড়ি ধরে টানা-হেঁচড়া করে লাঞ্ছিত ও শারীরিক শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালানোর খবর বাংলাদেশের সময় টিভি, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বদেশ, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখে পড়ে, একজন নারীর পক্ষে একরাশ লজ্জা নিয়ে এই প্রবন্ধ লিখতে বসেছি।
৮ মার্চ বাংলদেশের চট্টগ্রামের নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে ধর্মীয় আয়োজনে, বৌদ্ধ জনসাধারণ বিহারে প্রবেশ করার সময় বাঁধা প্রদানকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও কথা কাটাকাটি হয়। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ, বাংলাদেশ রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বৌদ্ধ মহিলা সমিতি বাংলাদেশ এর সভাপতি রেখা রানী বড়ুয়াকে, অধ্যাপক ডঃ জিনবোধি ভিক্ষু সকলের সামনে “বেইশ্যা, বেয়াদব, শয়তান” বলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় অকথ্য গালিগালাজ করেন এবং এক পর্যায়ে তার শাড়ির আঁচল খুলে ফেলে তাঁকে শারীরিক শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এসময় পাশে থাকা তাঁর স্বামী, স্ত্রীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে স্ত্রীর হাতে থেকে হ্যান্ডপার্টস নিয়ে ডঃ জিনবোধি ভিক্ষুর মাথায় আঘাত করেন। ভিডিওতে এইও দেখা যায় ঐ মহিলার স্বামী উপস্থিত পুলিশ কর্মকতাদের তাৎক্ষণিক স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে অবহিত করছেন। পরে এই হ্যান্ডপার্টসটিকে একটি মহল ডঃ জিনবোধি ভিক্ষুকে জুতা দিয়ে পিটিয়েছে প্রচার করে অন্যান্য বৌদ্ধ ভিক্ষু ও শান্তিকামী বৌদ্ধ নরনারীর মনে ক্ষোভের সঞ্চার করে এবং এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডা মুহূর্তে ডালপালা বিস্তার করে বিভিন্ন উত্তেজনা মূলক কর্মকান্ড শুরু হয়, এই সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হতে থাকে।
দুঃখজনক হলো আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র গুলোতে ধর্মীয় ব্যক্তিরা কোন নারীর প্রতি অন্যায় করলে সাথে সাথে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে এনে মহিলার চরিত্র হরণে সমাজ ব্যস্ত হয়ে উঠে। সেরকমই এই ক্ষেত্রেও ডঃ জিনবোধি ভিক্ষুর পক্ষে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিবাদ সভা করে, বৌদ্ধ ভিক্ষুর উপর আঘাতের বিষয়কে সামনে এনে নারীর লাঞ্ছিত করার বিষয়কে গৌণ করার জন্য একটি গ্রুপ অপতৎপরতা শুরু করে। বৌদ্ধ বিহারে ঐ নারীর নামে পোষ্টার, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও তৈরী করে ঐ লাঞ্ছিত নারীকে শতবার, বারেবার পুনঃ লাঞ্ছিত করা শুরু হয়।
জানা যায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগ হতে ডক্টরেট করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ডঃ জিনবোধি ভিক্ষুর গবেষণা অভিসন্দর্ভের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক ভারতের রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারপ্রাপ্ত শ্রদ্ধেয় ডঃ সুকোমল চৌধুরীর স্যার। ডঃ জিনবোধি ভারত-বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তির অধীনে ১৯৮৮ সালে পাঁচ বছরের বৃত্তি নিয়ে গবেষণা নিবন্ধ রচনা করতে সমর্থ হন।
ডঃ জিনবোধি ভিক্ষুর পক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, ঐ মহিলা ডঃ জিনবোধি ভিক্ষুর মোবাইল নিয়ে নিয়েছিলেন। আবার ঐ ভুক্তভোগী মহিলা পরেরদিন পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, নিজের শাড়ি ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য তিনি মোবাইলটি ডঃ জিনবোধি ভিক্ষুর হাত হতে নিয়ে পাশে উপস্থিত পুলিশ কর্মকতাকে দিয়ে দিয়েছেন। সেখানে পুলিশ প্রশাসনের অনেকে এবং মহিলা পুলিশও ছিলেন। তাহলে ডঃ জিনবোধি ভিক্ষুর মোবাইল নিয়ে নিলে উনি তা পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে পারতেন বা মহিলা পুলিশ দিয়ে ঐ মহিলার দেহ তল্লাশী করাতে পারতেন। কিন্তু তিনি কিছুই না করে ঐ মহিলার শরীরে হাত দেন এবং শাড়ি ধরে টানা-হেঁচড়া করতে থাকেন। নারী দিবসে নারীকে এর চেয়ে ভাল উপহার আর কিবা হতে পারে। তাছাড়ুও তিনি যদি এতই অসহিষ্ণু হন, তাহলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষাত্বে বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনার প্রয়োজন।
আজ একরাশ লজ্জা নিয়ে বিবেকবান সমাজের কাছে জিজ্ঞাসা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগ হতে ডক্টরেট, একজন শিক্ষক কিভাবে একজন নারী ও মাতৃ জাতিকে বেইশ্যা বলে সম্বোধন করেন? তার এমন অসহিষ্ণু আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। গুণী ব্যক্তির আচরণ আরো সংযত , নিয়ন্ত্রিত, পরিমিত, শান্ত, বিনীত, হওয়া বাঞ্ছনীয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগ হতে ডক্টরেট ব্যক্তি প্রকাশ্য দিবালোকে নারীর শাড়ি ধরে টানা-হেঁচড়া করবেন, নারীকে বেইশ্যা বলবেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হয়।
লেখকঃ কথা সাহিত্যিক, কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক।