
কুচবিহার ঃ দলের অভ্যন্তরে এক সময়কার প্রবল বিরোধীরা কি ফের কোচবিহারের বর্ষীয়ান তৃণমূল কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। বর্তমান জেলা সভাপতি পার্থ প্রতিম রায়ের রবি ঘনিষ্ঠ হওয়ার একাধিক ছবি ইতিমধ্যেই আমরা সামাজিক মাধ্যমে দেখেছি। গতকাল কোচবিহারে একটি অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সাথে পাশাপাশি বসে ছবি তুলে আরেক তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহের সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার পর সেই চর্চাই শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।তৃণমূলের কোচবিহার জেলা রাজনীতিতে পার্থ প্রতিম রায় এক সময় রবীন্দ্রনাথ ঘোষের হাত ধরেই উঠে এসেছেন। রবীন্দ্রনাথ বাবুর চেষ্টাতেই কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন পার্থ। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃনমূলে যোগ দিয়ে দিনহাটা কেন্দ্র থেকে উদয়ন বাবুর ঘাস ফুল প্রতীকে প্রথমবারের জয় পাওয়ার পিছনেও রবীন্দ্রনাথ বাবুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু তারপর তোর্সা নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। এক এক করে পার্থ প্রতিম রায় এবং উদয়ন গুহ দুজনেই রবীন্দ্রনাথ বাবুর প্রবল বিরোধী হয়ে উঠেছিলেন। সদ্য সমাপ্ত পুরসভা নির্বাচনের আগে আগে নাটাবাড়িতে গিয়ে এক দলীয় কর্মী সভায় প্রকাশ্যে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে শোনা গিয়েছিল। এরপর দুপক্ষের প্রকাশ্যে বাকবিতণ্ডাও কিমি. হয় নি। স্বাভাবিক ভাবেই রবীন্দ্রনাথ বাবুর সাথে ফের কখনও পার্থ এবং উদয়ন বাবুর সম্পর্কের সেতু স্থাপনের চেষ্টা হবে, সেটা বোধ হয় অনেক বড় রাজনৈতিক বিশ্লেষকও ভাবতে পারেন নি। তবে কথায় বলে না, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু হয় না, সেটাই আরকি!পুরসভা নির্বাচনের পরেপরেই কোলকাতায় তৃণমূলের একটি সাংগঠনিক সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কোচবিহারের জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেন পার্থ প্রতিম রায়কে। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরেই কোচবিহারে ফিরেই রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সাথে বিরোধ মিটিয়ে যৌথ সভাবে সংগঠন পরিচালনা করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এরপর তিনি রবীন্দ্রনাথ বাবুর বাড়িতে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদও নিয়েছিলেন। সেই ছবিও সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। এরপর আরও বেশ কিছু ছবি দলের কর্মী অনুগামীদের মাধ্যমে ফেসবুক ওয়ালে ভেসে উঠেছে। কাকা ভাইপোর মধ্যে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের গুঞ্জনও কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল।তবে উদয়ন গুহের সাথে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ফের কখনও পাশাপাশি কথা হবে, এটা হয়ত অনেকেই ভাবতেই পারেন নি। কিন্তু বাস্তবে সেটাই দেখা গেল। গতকাল কোচবিহার পুলিশ লাইনের মাঠে একটি খেলার অনুষ্ঠানে অনেক জনপ্রতিনিধির সাথে উপস্থিত ছিলেন দলের অভ্যন্তরে চরম প্রতিপক্ষ বলে পরিচিত ওই দুই প্রবীণ নেতা। পাশাপাশি বসাই শুধু নয়, খাবারের প্যাকেটও আদান প্রদান করতে দেখা গিয়েছে তাঁদের মধ্যে। কথাও হয়েছে টুকটাক। তাঁদের ঘিরে ধরে ছবিও তুলেছেন অনেকেই। সেই ছবি গতকালই উদয়ন বাবুর ফেরবুকে ওয়ালে প্রকাশিত হয়েছে। ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘আমরা বৃদ্ধাশ্রমের বন্ধুরা’। দীর্ঘ বৈরিতার পর আবার বন্ধু সম্বোধনের অন্তর্নিহিত অর্থ এখন সবাই খুঁজে চলেছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলছেন, “কোচবিহারে দলের জন্ম দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। এখনও যে তিনি জেলা সংগঠনে অন্যতম মুখ, তা বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেক নেতাই বুঝে গিয়েছেন। তাই এই ঘনিষ্ঠ হওয়ার কৌশল।” অনেকে আবার প্রশ্ন, ঘনিষ্ঠ হওয়ার কৌশলের পিছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য লুকিয়ে নেই তো!