নিজস্ব প্রতিনিধি(দেবযানী): মাত্র দু’ সপ্তাহ আগেই তিনি হারিয়েছেন সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে। সেই ভয়ানক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন রনজি ট্রফি ম্যাচে। দাঁতে দাঁত চেপে তাঁর সেই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই বিষ্ণু সোলাঙ্কির জীবনে নেমে এল ফের বিপর্যয়। বাস্তবের হিরো বিষ্ণু সোলাঙ্কি পিতৃহারা হলেন।বরোদার মিডল অর্ডার ব্যাটার ১২ ফেব্রুয়ারি হারিয়েছেন নবজাতক কন্যাকে। কিন্তু পিতৃত্বের আনন্দ উপভোগ করার আগেই তছনছ হয়ে যায় তাঁর পরিবার। শিশুটি পৃথিবীর আলো দেখার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বিষ্ণুকে ছেড়ে চলে যায় বহুদূরে। তার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে বিষ্ণু সোলাঙ্কি ফিরে আসেন তাঁর রাজ্য দলের হয়ে রনজি ট্রফি খেলতে। বাধ্যতামূলক নিভৃতবাস শেষ করেই বুকে পাথর চাপিয়ে চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে যান তিনি। তারপরেই ক্রিকেটবিশ্ব দেখে এক অদম্য লড়াই। ১৬১ বলে ১০৪ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন বরোদার এই ব্যাটার। মারেন ১২টি চার। তাঁর এই লড়াইয়ের কথা শুনে শ্রদ্ধায় মাথায় ঝোঁকায় ক্রিকেট মহল থেকে আমজনতা। এমন মরিয়া লড়াই করে তাঁর দলকে প্রথম ইনিংসে ৫০০ রানের গণ্ডি পার করান বিষ্ণু।কিন্তু এতেও তাঁর দুঃখের শেষ হল না। ২৭ ফেব্রুয়ারি রঞ্জি ট্রফিতে চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে ম্যাচের চতুর্থ দিন ফিল্ডিং করার সময় দলের ম্যানেজার ধর্মেন্দ্র আরোথে বিষ্ণুকে সাজঘরে ডেকে পাঠান। সেখানে তাঁকে বাবার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। দলের বাকিরা তখনও কিছু জানতেন না। পরে তাঁরা সবটা জানতে পারেন। দলের অধিনায়ক কেদার দেওধর বলেন, ‘‘সাজঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে মোবাইলে বাবার শেষকৃত্য দেখে বিষ্ণু। ওর জন্য খুব কঠিন মুহূর্ত ছিল। তবে ও যে সাহস দেখিয়েছে তাকে কুর্নিশ জানাই।’’এই পরিস্থিতিতে বিষ্ণুর পাশে দাঁড়িয়েছে বরোদা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। সচিব অজিত লেলে বলেন, ‘‘আমরা খবরটা পেয়ে দলের ম্যানেজারকে সেটা জানাই। বলা হয় বিষ্ণু চাইলে বাড়ি ফিরতে পারে। কিন্তু ম্যানেজার আমাদের জানান, বিষ্ণু দলের সঙ্গেই থাকবে বলে ঠিক করেছে। ক্রিকেটের প্রতি ওর দায়বদ্ধতা বাকিদের শেখা উচিত।’’অধিনায়ক দেওধর বলেন, ‘‘গত দু’মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন বিষ্ণুর বাবা। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মৃত্যুর পরে বেশি ক্ষণ দেহ ফেলে রাখা যেত না। তাই বিষ্ণু চাইলেও শেষকৃত্যের আগে বাড়ি পোঁছতে পারতেন না। বিষ্ণুর দাদা শেষকৃত্য করে। এই পরিস্থিতিতে ও কী ভাবে ক্রিকেট খেলল সেটাই আমাদের অবাক করছে।’’