নিজস্ব প্রতিনিধি(সতীশ কুমার): রাজ্যসভায় মনোনীত হলেন সুধা মূর্তি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসেই এই কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ইনফোসিস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন সুধা মূর্তিকে রাজ্যসভায় মনোনীত করেছেন। নারী শক্তির প্রতীক হিসাবেই রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) মনোনীত করা হয়েছে সমাজকর্মী সুধা মূর্তিকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যসভায় তাঁর মনোনয়নের জন্য সুধা মূর্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সমাজসেবা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ইনফোসিসের কর্তা নারায়ণ মূর্তির স্ত্রী সুধা শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট লেখিকা হিসাবে পরিচিত। তিনি যে রাজনীতিতে যোগ দিতে পারেন সেই জল্পনা চলছিলই। নারী দিবসে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সেই জল্পনাই সত্যি করল। দিন কয়েক আগেই সুধা আচমকাই হাজির হয়েছিলেন নয়া সংসদ ভবনে। শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীনই নয়া সংসদ ভবন দেখতে এসেছিলেন তিনি।
৭৩ বছর বয়সি সুধা মূর্তি প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লোকোমোটিভ কোম্পানিতে কাজ শুরু করেছিলেন। পুণে, মুম্বই এবং জামশেদপুরে কাজ করেছিলেন তিনি। এরপরে ওয়ালচাঁদ গোষ্ঠীতে সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া বেঙ্গালুরু এবং ক্রাইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে পড়াতেন তিনি। কন্নড়, ইংরেজি এবং মারাঠি মিলিয়ে প্রায় ৪০টিরও বেশি বই লিখেছেন সুধা মূর্তি। তাঁর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় বইগুলির মধ্যে আছে ডলার বহু, রুনা, মহেশ্বতা, হাউ আই টট মাই গ্র্যান্ডমাদার টু রিড… এছাড়াও একাধিক ইংরেজি এবং কন্নড় সংবাদপত্রে তিনি কলাম লিখেছেন।
রাজ্যসভায় তাঁকে সাংসদ হিসাবে মনোনীত করায় খুশি সুধা। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি খুব খুশ। সেই সঙ্গে আমি এটা অনুভব করছি যে আমাকে আরও বেশি দায়িত্ব দেওয়া হল। আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুশি কারণ গরীবদের জন্য কাজ করার জন্য অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম পেয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা আমার কাছে নতুন জিনিস। এই বিষয়টি নিয়ে আমাকে পড়াশোনা করতে হবে।’’ সুধা আরও যোগ করেন, ‘‘আমি মনে করি না যে আমি এক জন রাজনীতিবিদ। আমি এক জন মনোনীত রাজ্যসভার সাংসদ। আমার জামাইয়ের (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক) রাজনৈতিক পরিসরের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক পরিসরের সম্পূর্ণ ভিন্ন।’’
উল্লেখ্য, ৭৩ বছর বয়সি সুধা মূর্তিকে ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০২৩ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করেছিল সরকার।
সুধা মূর্তির বিশিষ্ট ও স্বাধীন পরিচয় সত্ত্বেও রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে লোকসভা ভোটের মুখে তাঁর রাজ্যসভার সদস্যপদে মনোনয়ন নিয়ে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, হিন্দি বলয়ে বিজেপি পদ্ম ফোটাতে পারলেও এখনও পর্যন্ত তাদের দাক্ষিণাত্য অভিযান ব্যর্থ থেকে গিয়েছে। বিশেষত গতবছর কর্নাটক বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের কাছে গোহারা হয়েছে বিজেপি।
এবারের লোকসভা ভোটে বিজেপি দক্ষিণ ভারতকে টার্গেট করে এগোচ্ছে। তার মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানায় খাতা খুলতে পারলেও কেরল ও কর্নাটক নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে পদ্ম নেতৃত্ব। বিশেষ করে কর্নাটকে পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারছে না দিল্লির নেতৃত্ব। সুধা মূর্তি কর্নাটকসহ দক্ষিণ ভারতে একটি পরিচিত নামই শুধু নয়, সাধারণ মানুষের কাছেও তাঁর মানবিক কাজকর্মের কারণে অতি পরিচিত মুখ। এছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ার সুবাদে ব্রিটেন-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও অনেক চওড়া হওয়ার আশা করা যায়। সর্বোপরি ইনফোসিসের মালকিন হওয়ায় অগাধ সম্পত্তি রয়েছে তাঁদের পরিবারে। সব মিলিয়ে দক্ষিণ ভারতীয় রাজনীতিতে মূর্তির পরিচ্ছন্ন, সর্বজনগ্রাহ্য, আন্তরিক ‘মূর্তি’কে তুলে ধরে ভোটের মুখে চমক দেওয়ার চেষ্টা বলে রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই মত।