‘প্রয়াস’ – শিল্প ও সংস্কৃতির সমন্বয়’ প্রায় তিন দশক আগে নব্বইয়ের প্রাক্কালে ‘প্রয়াস’- এর পথ চলার শুরু এবং ত্রিশ বছর অতিক্রম করে এসে পৌঁছেছে এক নতুন অধ্যায়ে। সূচনা হয়েছিল ডঃ সুতপা ভৌমিকের হাত ধরে, যিনি প্রখ্যাত ওডিসি নৃত্যশিল্পী তথা গুরু শ্রী গিরিধারী নায়েকের সুযোগ্য শিষ্যা। যারা ‘প্রয়াস’-এর সঙ্গে যুক্ত, পেশাগতভাবে কেউই শিল্পী নয়, এরা প্রত্যেকে ‘সমাজের বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন পেশায় যুক্ত থেকে, শুধুমাত্র ভালোবাসার জায়গাটিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াসে এবং বাংলা সংস্কৃতির সুরুচিপূর্ণ প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়।এবারের ৩১তম বর্ষে “প্রয়াস”-এর নিবেদন ছিল,প্রথমার্ধে – ওডিসি ধ্রুপদী নৃত্যশৈলী এবং দ্বিতীয়ার্ধে – বাবু-বিবির পালা।
ওডিসি নৃত্য পরিবেশন করেন ডঃ মনামী মাইতি এবং অলঙ্কৃতা চক্রবর্তীর। ওডিসিতেই একক নৃত্যে, Bhavani – Dawani পরিবেশনায় ডঃ সুতপা ভৌমিক অনবদ্য। সায়ন মিত্রের গলায় এই গান এক অন্য মাত্রা পায়। এবং এসরাজে যোগ্য সঙ্গত করেছেন ঋতম বাগচী।
দ্বিতীয়ার্ধে ‘বাবু-বিবির পালা’ এক অভিনব ভাবনার সাক্ষী হয়ে থাকল। এ যেন এক সময়ের দলিল। খুব সুচারু ভাবে, অত্যন্ত যত্নের সাথে “প্রয়াস” এই প্রযোজনাটি মঞ্চস্থ করেছে। শুরুতেই ‘আহা ছল করে জল আনতে আমি যমুনাতে যাই’ গানে সুমনা মল্লিকের গানের সাথে অভিনয় মজলিশ জমিয়ে দেয়। পুরাতনী গানে, টপ্পা গানে অরিন্দম মুখার্জি এবং ডঃ আরাত্রিকা ভট্টাচার্য অতুলনীয়। বিশেষত অরিন্দম মুখার্জির কণ্ঠে ‘তুমি আমার হও যে ঠাকুর’ গানের সাথে সৌরভ দত্তের নৃত্য পরিবেশনা অন্য মহল তৈরি করে দিয়েছিল। ডঃ আরাত্রিকা ভট্টাচার্য সব গানই সমান দক্ষতার সাথে পরিবেশন করেছিলেন। তার ‘এখন কি হে নাগর তোমার’ গানের সাথে ডঃ সুতপা ভৌমিকের নাচ এককথায় অসাধারণ। অভিনয়ের সাথে এই নাচ ডঃ সুতপা ভৌমিক যে দক্ষতার সাথে পরিবেশন করেছেন সমগ্র অনুষ্ঠানটিকে এক অন্য মাত্রা দেয়। আরাত্রিকার কন্ঠে ‘অনুগত জনে কেন’ আর নাচে মনামী-এই জুড়ি এক কথায় অসাধারণ। তাদের উপস্থাপনা মন ছুঁয়েছে সমস্ত দর্শকদের। আরাত্রিকার কন্ঠে ‘প্রাণ ছিল প্রাণে’-এর সাথে নাচে যোগ্য সঙ্গত করেছেন মধুমিতা মন্ডল। অলঙ্কৃতা চক্রবর্তীর নাচ বেশ ভালো ওর অভিনন্দন প্রাপ্য অনেক বেশী। কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীতে সায়ন মিত্র অদ্বিতীয়। বিশেষত ‘আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে’ গানে সায়ন মিত্র, নাচে সৌরভ দত্ত এবং এসরাজে ঋতম বাগচী সকল দর্শক মন কাঁদিয়েছে। ডঃ পল্লব সাহার ‘নিমন্ত্রণ’ পাঠ দশর্কদের মুগ্ধ করেছে। এছাড়াও ‘জ্ঞানদানন্দিনী দেবী’ ও ‘রানী রাসমনী’র পাঠ ও অভিনয়ে যথাক্রমে সুমনা দত্ত চক্রবর্তী ও সোমা পাল অসাধারণ। ক্ষমা ব্যানার্জির অভিনয়ও যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। প্রসেনজিৎ ঘোষ, ‘গিরিশ ঘোষ’ থেকে বাবুদের বাবুগিরি যিনি অসাধারণ দক্ষতার সাথে তুলে ধরলেন। তার গিরিশ-বিনোদিনীর নাটকে তাকে যোগ্য সঙ্গত দিলেন ‘বিনোদিনী’র চরিত্রে অভিনয় করা সুদেষ্ণা বসু ঠাকুর। পুরো অনুষ্ঠানটিকে কথার বুনোটে সুন্দর ভাবে বেঁধে রেখেছিলেন সংযুক্তা ব্যানার্জি এবং কেয়া দেব সেন।
এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে ছিলেন,প্রখ্যাত বাচিক শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় , সঙ্গীত শিল্পী সাগরময় ভট্টাচার্যসহ অন্যান্যরা।