বালুরঘাট, তিওড় ধীরেন মহন্ত চ্যারিটেবল সোসাইটির হোমের আবাসিক নাবালিকাদের উপর যৌন নির্যাতন চালানোর ঘটানোর দায়ে মূল অভিযুক্ত দিলীপ মহন্তকে যাব্বজীবন কারাদন্ডের পাশাপাশি তিন লক্ষ টাকা জরিমানা করল আজ বালুরঘাট জেলা আদালতের সেকেন্ড এন্ড পস্কো কোর্টের বিচারক সুজাতা খরগো।জরিমানা অনাদায়ে আরো দুইবছর কারাবাসের আদেশ দিয়েছেন তিনি। এরপাশাপাশি প্রধান অভিযুক্তের সাথে এই কান্ডে জড়িত আবাসিকের মহিলা সুপার সাবিত্রী হেমব্রম ও অন্য এক মহিলা কর্মী খুশি মন্ডলকে ১০ বছরের কারাদন্ড ও ৩০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করার ও আদেশ আজ দিয়েছেন বালুরঘাট আদালতের সেকেন্ড এন্ড পস্কো কোর্টের বিচারক সুজাতা খরগে। এই দুই মহিলা সাজাপ্রাপ্ত আসামী যদি তাদের আর্থিক জরিমানা দিতে না পারেন। তবে তাদের আরো একবছর কারাবাসের নির্দেশ আজ আদালতের বিচারক দিয়েছেন বলে সরকারি আইনজীবি রীতব্রত চক্রবর্তী।করোনা কালে এই মামলা গতকাল ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জেল থেকে আদালতের বিচারক এই তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। আজ তাদের বালুরঘাট জেলা আদালতে সশরীরে জেল থেকে নিয়ে এসে বিচারকের আদালতে উপস্থিত করা হলে বিচারক দুপুরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট আদালতের অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা দ্বিতীয় কোর্টের (পক্সো স্পেশাল) বিচারক সুজাতা খারগে এই রায় দেন । দিলীপ মহন্তের বিরুদ্ধে ৩৭৬(২)(ডি)(আই) আইপিসি সহ ৬@১০পক্সো ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। হোমের প্রাক্তন সুপার সাবিত্রী হেমব্রম এবং সহায়িকা খুশি মন্ডলকে বিরুদ্ধে ৩৭৬(২)(ডি)(আই) আইপিসি, ১০৯ আইপিসি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় ।গতকাল অবশ্য পর্যাপ্ত সাক্ষ্মী প্রমাণের অভাবে দিলীপ মহন্তের দুই ড্রাইভারকে বেকুসুর খাসাল ঘোষণা করা হয়েছে । এতদিন এদের কোন জামিন না হওয়ায় বালুরঘাট জেলে বন্দি ছিল তারা।আদালত সুত্রের খবর, ২০১৫ সালের ৩রা আগষ্ট দক্ষিন দিনাজপুর জেলার হিলি থানার তিওরের ধিরেন মহন্ত চ্যারিটেবিল সোসাইটি মালিক দিলীপ মহন্তের নামে গুরুতর অভিযোগ ওঠে । হোমের মেয়েদের ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালচ্ছিলেন বলে অভিযোগ দায়ের হয় হিলি থানায়। তাদের উপর যৌন হেনস্থাও নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে দিলীপ মহন্তের বিরুদ্ধে । ঘটনায় হোমের ৫ নাবালিকা মেয়েরা ছাড়াও ওই হোমের সুপার ভক্তি সরকার লাহা এব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হিলি থানায়। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ মূল অভিযুক্ত দিলীপ মহন্ত ছাড়াও তার দুই গাড়ি চালোক ও হোমের এক প্রাক্তন সুপার খুশি মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে । পুলিশি রিমাইন্ডারের সময় আবেদনের ভিত্তিতে দিলীপ মহন্তের বাড়ি থেকে বিদেশী একধিক নামি দামি মদের বোতল সহ ৪৫ রকম জিনিস বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। এছাড়াও তার ব্যবহারের কম্পিউটার, সিসিটিভি সহ একধিক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বাজেয়াপ্ত হয় । যার মাধ্যমে একাধিক সুত্র সামনে আসে পুলিশের কাছে। তারপর থেকে পুলিশ কাস্টডিতেই ছিলেন অভিযুক্তরা । করোনার কারণে বিচার প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হলেও এদিন তিনজনকে সাজা শোনানোয় খুশি অত্যাচারিতারা। যদিও সাজা প্রাপ্ত খুশি মন্ডলের মা এই রায়ে খুশি নন। তার বক্তব্য তার মেয়ে নির্দোষ। সে তো অনেক আগেই কাজ ছেড়ে চলে এসেছিল পুলিশ অনেক পরে তাকে ধরে নিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে। তবে তিনি তার মেয়ের মুক্তির জন্য উচ্চ আদালতে যাবেন কিনা তা ঠিক করে এই মুহুর্তে করে উঠতে না পারলেও তিনি বলেন মেয়েকে তো জেলে পচে মরতে দিতে পারিনা দেখি কি করি।অন্যদিকে রায় শোনার পর অভিযোগকারিনী ভক্তি সরকার লাহা আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে কেদে ফেলে বলেন এরকম যেন আর কোন আবাসিক চত্বরে কোন মেয়েদের সাথে এরকম দুষ্কর্ম ঘটানোর সাহস কেউ না পায়। এটাই তিনি চান। তিনি জানান আজ এই অভিযোগ করার পর থেকে তাকে নানাভাবে হেনস্থ্যার পাশাপাশি প্রানে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। তার ছেলের প্রান নাশের চেষ্টা চালিয়েছে। যাতে আমি অভিযোগ তুলে নেই। কিন্তু আমি নিজের চোখে আবাসিক মেয়েদের উপর অত্যাচারিত হতে দেখেছি। তা দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারিনি বলেই অভিযোগ তুলতে যাই নি। বলে তিনি জানান।২০১৫ সালে তীওড়ের এই ঘটনা দক্ষিন দিনাজপুর জেলায় যথেষ্ট সোরগোল ফেলে দিয়েছিল। জনতা অভিযুক্ত দীলিপ মহন্তের বালুরঘাটের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছিল সে সময়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পেশায় এল আই সি এর এজেন্ট হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু চালচলন ছিল যুবরাজের মত। তার স্ত্রী কন্যা দিল্লি তে থাকার সুবাদে হোমের মেয়েদের বাড়িতে নিয়ে এসে এই সব অপকর্ম চালাতো বলে অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। স্বাভাবিক ভাবে আজকে এই রায় জানার পর সব মহলে খুশির হাওয়া।