HomePoliticsঅধীরের 'বাউন্সার' সামলাতে একেবারে তৈরি ইউসুফ পাঠান

অধীরের ‘বাউন্সার’ সামলাতে একেবারে তৈরি ইউসুফ পাঠান

- Advertisement -

রাজেন্দ্র নাথ দত্ত:মুর্শিদাবাদ :
খেলার ময়দান থেকে এবার রাজনীতির ময়দানে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই নবাবের জেলায় বহরমপুরের মাটিতে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দিলেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা জোড়া বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ইউসুফ পাঠান। বৃহস্পতিবারই তিনি প্রথম বার পা রাখেন বহরমপুরে। সেখানে তাঁকে বরণ করে নেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। যে হুমায়ুন একদা ইউসুফের প্রার্থিপদের বিরোধিতা করে নির্দল হিসাবে লড়ার হুমকি দিয়েছিলেন। ‘বদলে’ যাওয়া হুমায়ুনের দাবি, পাঠানকে জেতানোর দায়িত্ব তাঁর। পাশাপাশি, হুঁশিয়ারি অধীর চৌধুরীকে।
মারকুটে ব্যাটার হিসাবে পরিচিত পাঠান জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসেও ‘চালিয়ে’ই খেলতে চান। প্রথম বার বহরমপুরে পৌঁছে সোজা ব্যাটে খেলে সেই বার্তা দিলেন তিনি। নাম ঘোষণার পর থেকেই পাঠানকে বহিরাগত বলে আক্রমণ শুরু করেছিল বিরোধীরা। বহরমপুরের বিদায়ী সাংসদ অধীর ছিলেন সেই সম্মিলিত আক্রমণের পুরোভাগে। এত দিন এ নিয়ে কোনও কথাই বলেননি পাঠান। বহরমপুরের ‘ঘূর্ণি পিচে’ ব্যাট করতে নেমে সপাটে সেই প্রশ্নের জবাব দিলেন। বললেন, ‘‘আমাকে বহিরাগত বলা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীও তো গুজরাতের বাসিন্দা হয়ে বারাণসী থেকে ভোটে লড়েন। কিন্তু ওঁকে কি বহিরাগত বলা হয়? আমিও গুজরাত থেকে বাংলায় এসেছি ভোটে লড়তে, তা হলে আমি কেন বহিরাগত হতে যাব! আমি বাংলারই ছেলে। এখানে থাকতেই এসেছি।’’ এ কথা শুনে চেয়ার থেকে প্রায় লাফিয়ে উঠে হাততালি দিলেন দু’দিন আগে ইউসুফের প্রার্থিপদের ঘোর বিরোধিতা করা বিধায়ক হুমায়ুন। ভোটে জিতলে দলনেত্রী মমতাকে কী উপহার দেবেন? হাসতে হাসতে ইউসুফের জবাব, ‘‘আমি কী উপহার দেব? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তো বলেছেন, আমি ভোটে জিততে পারলে উনি আমাকে কলকাতার যত বিখ্যাত মিষ্টি আছে, সব খাওয়াবেন। আমি তারই অপেক্ষায় আছি।লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। স্বাভাবিকভাবেই প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন সমস্ত দলের প্রার্থী-নেতা-কর্মীরা। নিজের লোকসভা এলাকায় বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, কথা বলছেন এলাকাবাসীদের সঙ্গে। শুনছেন তাঁদের সমস্যার কথা।
বহরমপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের কাছে মঞ্চ বেঁধে পাঠানকে স্বাগত জানিয়েছে জেলা তৃণমূল। সেই মঞ্চে সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন ভরতপুরের ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক। যে হুমায়ুন ক’দিন আগে পর্যন্তও ইউসুফের নামে প্রকাশ্যে আপত্তি জানাচ্ছিলেন। এমনকি, হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন যে, প্রয়োজনে বহরমপুর কেন্দ্রে নির্দল হিসাবে লড়বেন। তার পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। সম্ভাবনার শিল্প রাজনীতির আঙিনার বাসিন্দা হুমায়ুনের ভাবনাতেও এসেছে আমূল বদল। বৃহস্পতিবার ইউসুফকে জেতানোর চ্যালেঞ্জ নিলেন সেই হুমায়ুন। পাশাপাশি, অধীরকে কটাক্ষ করে বললেন, ‘‘ইউসুফকে জেতানোর দায়িত্ব আমার। বহরমপুর কেন্দ্রে রেকর্ড মার্জিনে জিতবে তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ। এ বার দেখে নেব অধীর কত বড় বাঘ!এ দিন মঞ্চে প্রচারের আলো পুরোটাই ছিল পাঠানকে ঘিরে। জোড়া বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্যকে দেখতে ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। জেলা তৃণমূলের তরফ থেকে অবশ্য কার্যত ‘হুইপ’ জারি করা হয়েছিল দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে। বস্তুত, ইউসুফকে নিয়ে বহরমপুরবাসীর মধ্যে কতটা উন্মাদনা তৈরি হয় তা মাপতে তৈরি ছিল বিরোধীরাও।এই ক্রিকেটার শুধুমাত্র আইপিএল জেতেননি। ভারতের দুই বিশ্বজয়ী টিমের অংশীদার ছিলেন। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বজয়ী টিমে ছিলেন পাঠান। সেই বিশ্বজয়ী এবার লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে। যদিও লোকসভার ময়দানে লড়াইটা খুব একটা সহজ হবে না ইউসুফের। যে বহরমপুর কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থী করা হচ্ছে, সেই আসনটি অধীর চৌধুরীর গড় হিসাবে পরিচিত। পাঁচবার ওই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন অধীর। আসলে তৃণমূল এবার যে কোনও মূল্যে অধীরকে হারাতে মরিয়া। তাই ইউসুফের মতো জাতীয় দলের প্রাক্তন তারকাকে প্রার্থী করা হল ওই কেন্দ্র থেকে।

writer

writer

RELATED ARTICLES
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments